Advertisement
১৮ মে ২০২৪

শিলাবৃষ্টিতে চাল ভেঙে পড়ে মৃত্যু, আহত ১৫

কেতুগ্রামের মানুষ বোমা পড়তে দেখেছেন বেশ কয়েকবার, কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে এমন ক্ষয়ক্ষতির অভিজ্ঞতার আগে হয়নি তাঁদের। সোমবার বিকালে প্রচণ্ড ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে মোরগ্রামের এক বধূর মৃত্যু হয়েছে। কেতুগ্রামের আমগোড়িয়া, চিনিসপুর, আনখোনা, কোজলসা, আরনা-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টিতে বহু বাড়ির টিন, টালি ও অ্যাসবেসটস ভেঙে পড়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়ির জানলার কাঁচ ভেঙেছে।

বৃষ্টির পরে জমে রয়েছে শিলা। নিজস্ব চিত্র।

বৃষ্টির পরে জমে রয়েছে শিলা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০০:৫৪
Share: Save:

কেতুগ্রামের মানুষ বোমা পড়তে দেখেছেন বেশ কয়েকবার, কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে এমন ক্ষয়ক্ষতির অভিজ্ঞতার আগে হয়নি তাঁদের। সোমবার বিকালে প্রচণ্ড ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে মোরগ্রামের এক বধূর মৃত্যু হয়েছে। কেতুগ্রামের আমগোড়িয়া, চিনিসপুর, আনখোনা, কোজলসা, আরনা-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টিতে বহু বাড়ির টিন, টালি ও অ্যাসবেসটস ভেঙে পড়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়ির জানলার কাঁচ ভেঙেছে। তার ছিড়ে বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। সব্জির পাশাপাশি ধান ও পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে বলেও কৃষকদের দাবি। কেতুগ্রাম ১-এর বিডিও বিনয়কৃষ্ণ বিশ্বাস ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি সাহায্যের দাবি জানান তাঁর কাছে। বিডিও বলেন, এখনও সব এলাকা ঘুরে দেখা হয়নি। আমরা বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করছি।

কেতুগ্রামের ওই ব্লক ছাড়াও কাটোয়া মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। পাকা বাড়ির তেমন ক্ষতি না হলেও ধান, সব্জি ও আমের ক্ষতি হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। কাটোয়া মহকুমা কৃষি দফতরের আধিকারিক রবিউল ইসলাম বলেন, “মঙ্গলবার থেকে কৃষি দফতরের কর্মীরা এলাকা ঘুরে ঘুরে রিপোর্ট তৈরি করবেন। তখনই বোঝা যাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।” চাষিরা জানিয়েছেন, বিঘের পর বিঘে ধান শিলাবৃষ্টির জেরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কোথাও আবার ঝড়ের প্রকোপে ধান নুইয়ে পড়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেলে প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টির শুরু হওয়ায় কেতুগ্রামের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের মোরগ্রামের বধূ রূপালি বিবি (৪৫) একটি চালার নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কখনই ব্যাপক ঝড় ওঠায় একটি তালগাছ ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটির উপর। বিদ্যুতের খুঁটিটি উল্টে পড়ে ওই চালার উপর। চালাটি ভেঙে রূপালিদেবীর উপর পড়লে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির কাছে নলকূপ থেকে রূপালিদেবী জল আনতে গিয়েছিলেন। শিলাবৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারালেন তিনি। খবর পেয়ে মৃতার বাড়িতে গিয়েছিলেন কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ।

আমগোড়িয়া গ্রামের নব্বই বছরের বাসিন্দা লক্ষ্মীনারায়ণ ঘোষ বলেন, “হঠাৎ দুম-দাম আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। তারপরে যে শিলাবৃষ্টি দেখলাম জীবনে দেখিনি।” ওই এলাকার সাইদুল হক, মোজাম্মেল শেখরাও বলেন, “আমরা ছোট থেকে বোমার আওয়াজ শুনে, বোমা পড়তে দেখে বড় হয়েছি। কিন্তু এমন শিলাবৃষ্টির অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। আনখোনা গ্রামের সম্রাট সাহা ১০০ দিনের কাজের জায়গা দেখে সেচখাল ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। শিলাবৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে বটগাছের তলায় আশ্রয় নিয়ছিলেন তিনি। কিন্তু আহত হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারেননি। একই অবস্থা হয়েছে আমগোড়িয়া গ্রামের শিক্ষক মানিকচন্দ্র গুণের। তিনি মালগ্রামের স্কুল থেকে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। শিলার আঘাতে তাঁর মাথা ফেটেছে। কেতুগ্রামের বিধায়ক বলেন, “শিলাবৃষ্টির আঘাতে এলাকায় ১৫ জনের মত আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ৪-৫ জনের মাথা ফেটেছে। কেতুগ্রাম থানার আইসি বিজয় কুমার ঘোষও এলাকা ঘুরে রিপোর্ট তৈরি করছেন।”

আমগোড়িয়া গ্রামের মাঝি পাড়ার যুগলকিশোর মাঝি বলেন, “আমরা তখন ঘরের ভিতর ছিলাম। ১০ মিনিট ধরে শিলাবৃষ্টি হয়। অ্যাসবেসটাসের ছাদ ফেটে খাটের উপর পাথর পড়ে। আমার ছোট ছেলে খুব জোর বেঁচে গিয়েছে।” ওই এলাকারই বধূ হীরা মাঝি, তপু মাঝিরা জানান, খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ছেলেপুলে নিয়ে খাটের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। এক দিকে কাঁচ ভাঙা, আরেক দিকে ছাদের উপর শিল পড়ার আওয়াজে শুনে মনে হচ্ছিল বাড়ির ছাদটাই না ভেঙে পড়ে! ওই সময়টুকু কী ভয়াবহ অবস্থায় কেটেছে বলে বোঝাতে পারব না। ঝড়ের দাপটে কাটোয়া শহরের বিভিন্ন জায়গাতেও তার ছিঁড়ে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ketugram katwa hailstorm rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE