পুলিশ ভ্যানে আরাবুল।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার শেষের ২৪ ঘণ্টা আগে, শুক্রবার বিকেলে রক্তে ভাসল ভাঙড়।
নির্দল প্রার্থীর হয়ে প্রচারে গিয়ে গুলি লেগে মারা গিয়েছেন হাফিজুল মোল্লা (২৫) নামে মাছিভাঙার এক যুবক। স্থানীয় তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বাহিনীর আক্রমণেই প্রাণ গিয়েছে হাফিজুলের— অভিযোগ ভাঙড়ের জমি রক্ষা কমিটির।
ঘটনার পরেই আরাবুলের ‘বাড়াবাড়িতে’ বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাঙড়ে আরাবুল একটা ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশকে বলেছি গ্রেফতার করতে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত পেয়েই আসরে নামে বারুইপুর জেলা পুলিশের এসপিজি। রাতেই গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ককে। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার অরিজিৎ সিংহ জানান, উত্তর গাজিপুরে নিজের বাড়ির পিছনের একটি বাগান থেকে আরাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তখনও বেঁচে গুলিবিদ্ধ হাফিজুল মোল্লা। শুক্রবার ভাঙড়ে। —নিজস্ব চিত্র
ভাঙড়ের এ দিনের ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনও। কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি দিয়ে ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছেন নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ। তিনি ডিজি-কে ফোন করেও ভাঙড়ের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। এ দিন সন্ধ্যায় ভাঙড়ের পর্যবেক্ষকও বদল করেছে কমিশন।
এ দিন বিকেলে সাড়ে ৪টে নাগাদ নির্দল প্রার্থীদের সমর্থনে মিছিল বেরোয় ভাঙড়ে। অভিযোগ, সেখানেই বোমা-গুলি নিয়ে হামলা চালানো হয়। গুলি লাগে হাফিজুলের মাথায়। তাঁকে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবর ছড়া়তেই অবরোধ হয় লাউহাটি-হাড়োয়া রোড। আরাবুলের কার্যালয়ে ভাঙচুর চলে। তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের মোটরবাইক পোড়ানো হয়। হাফিজুলের মরদেহ নিয়ে রাত পর্যন্ত রাস্তায় বসে থাকেন আন্দোলনকারীরা। কমিটির নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরী জানান, আজ, শনিবার বেলা ৩টেয় মৌলালি মোড়ে জমায়েত করবেন তাঁরা।
গুলি চালনার ঘটনায় আরাবুলের ভাই আজিজুর ইসলাম ওরফে খুদের নামও উঠছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পরেই টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে আরাবুল অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আন্দোলনকারীরাই গুলি ছুড়ছিল। ওদের নিজেদের গুলিতেই মারা গিয়েছেন হাফিজুল।’’ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে অবশ্য মোবাইল বন্ধ হয়ে যায় আরাবুলের। পুলিশ সূত্রের দাবি, মোবাইল বন্ধ করে বাগানে গিয়ে লুকিয়েছিলেন আরাবুল। এ দিকে তাঁকে ধরতে এলাকায় পৌঁছে যান এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সঞ্জয় সিংহ, ডিআইজি প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ ভরতলাল মিনা-সহ পদস্থ পুলিশ অফিসারেরা। আশপাশের থানাগুলিকেও সতর্ক করা হয়। শেষ পর্যন্ত মোবাইল টাওয়ারের সূত্র ধরেই আরাবুলের খোঁজ মেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy