লিখন: আগে যে দখল করে, দেওয়াল তারই। পাল্লা দিয়ে চলছে বেদখলও। —নিজস্ব চিত্র
দেওয়ালের মুখও আছে!
সে শুধু শোনেই না, ভোটে প্রচারও করে। কার প্রচার? যে আগে দখল করে, তার।
ভোটের মরসুমে তাই কদর বাড়ে দেওয়ালের। দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই পলেস্তারা খসা দেওয়ালে লাগে চুনের পোঁচ। দ্রুত হাতে লিখে ফেলা হয় ‘অল ওয়াল ফর...’।
তার পরে সেই দেওয়ালই জানান দেয়, ভোটের হাওয়া গরম হচ্ছে। গদ্যময় জীবনে পদ্যের বাহার বুঝিয়ে দেয়, কাস্তের ধার, ফুলের কাঁটা, ঘাসের বারোমাস্যা কিংবা গোঁজের দম।
তবে ভোট রসিকদের আক্ষেপ, ‘‘ভোটের ছড়া আর আগের মতো নেই! বেশিরভাগ জায়গায় চোখে পড়ছে, দায়সারা করে আঁকা প্রতীক। আর পাশে লেখা, অমুককে ভোট দিন। আর যা দু’-একটা দেওয়ালে ছড়া চোখে পড়ছে, তাতে না আছে ধার, না আছে মজা!’’
তৃণমূল এ বার লিখেছে— ‘চকচকে রাস্তা ঝকঝকে আলো, সবাই বলছে তৃণমূল ভালো’। আত্মবিশ্বাসী বিজেপিও, ‘খুলবে বাক্স ফুটবে ফুল, বাংলা গড়বে পদ্মফুল’। দেওয়াল একটু বড় হলে ছড়াও বাড়ছে। যেমন, ‘মা কাঁদছে, মাটি ফাটছে, মানুষ বলছে বিজেপি আসছে। অনেক হল ভুল, এ বার পদ্মফুল’।
নবদ্বীপ কিংবা বহরমপুরের দেওয়ালে এখনও সে ভাবে সিপিএমের লেখা ছড়া তেমন চোখে পড়ছে না। সিপিএমের নবদ্বীপ এরিয়া কমিটির সম্পাদক আমিন আলি বলছেন, ‘‘ভোটের ছড়া তৈরি হয়েছে। লেখার কাজও শুরু হয়ে যাবে।’’ আর মুর্শিদাবাদের সিপিএম নেতা তথা নবগ্রামের বিধায়ক কানাই মণ্ডল বলছেন, ‘‘এমন ভয়ঙ্কর ভোটে পদ্য কোথা থেকে আসবে বলুন তো?’’
মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাসের কথায়, ‘‘দখল করা দেওয়ালও বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ছড়াটা লিখব কোথায়?’’ সেই মুশকিলও আসান করে দিচ্ছে ‘ওয়াল’। সেখানে ঝুঁকি কম। খরচও প্রায় নেই বললেই চলে। তাছাড়া নতুন প্রজন্ম দেওয়ালের থেকে অনেক বেশি চোখ রাখে ‘ওয়াল’-এ। ফলে, শাসক ও বিরোধী সকলেই ঝুঁকছেন সেখানে।
তবে সেখানেও ছড়ার ধার তেমন নেই বলেই দাবি ভোট রসিকদের। ‘কাল ছিল লাল খালি/ আজ ফুলে যায় ভরে’— পরিবর্তনের পরে বেশ সাড়া ফেলেছিল। ‘আমি ভোটের লাগিয়া ভিখারি সাজিনু, ফিরিনু গো দ্বারে দ্বারে’— দাদাঠাকুরের লেখা এই ছড়া আজও বহু মানুষের মুখে মুখে ঘোরে।
নবদ্বীপের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সোমনাথ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘সে বার কংগ্রেস দেওয়াল লিখল—‘চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে কদমতলায় কে, হাতি নাচছে ঘোড়া নাচছে জ্যোতিবাবুর বে’। তার পাশেই আবার বামপন্থীরা জবাব দিল— ‘ঠিক বলেছিস ঠিক বলেছিস ভাই, ১১ মার্চ ইন্দিরাকে সাজিয়ে আনা চাই’। ছড়ায় ছড়ায় লড়াই ছিল দেখার মতো। এখন সে সব আর কোথায়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy