Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

বিয়ে আটকে একঘরে, নতুন যুদ্ধে বিলকিস

উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর সমুদ্রপুরের মেনা সরজিনী পাহাড় হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির আপাত লাজুক ছাত্রীর চোখ দু’টোয় অসম্ভব ধার, গলায় শান্ত দৃঢ়তা—‘‘অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া অপরাধ। সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমার বাড়ির লোকেরা যদি আমাকে ত্যাজ্য করে তা হলে সেই অবস্থার সামনে দাঁড়াতে আমি প্রস্তুত।’’

অদম্য: বিলকিস খাতুন।

অদম্য: বিলকিস খাতুন।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫৮
Share: Save:

মেয়েটির সহায় ছিল না, সম্বল ছিল না, কিন্তু সাহস ছিল তুমুল। তাই রুখে দাঁড়িয়েছিল পরিবারের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। এই ‘ধৃষ্টতা’ দেখানোয় পরিবার তাকে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু কিছু অনাত্মীয় পণ করে ফেলেছিলেন, একা মেয়েটাকে হারতে দেওয়া যাবে না। তাঁরা এসে দাঁড়িয়েছেন পাশে। ঠোক্কর লেগে হুমড়ি খেয়ে আবার সেই কিশোরী ঘাড় শক্ত করে উঠে দাঁড়িয়েছে।

রোগা, লম্বা বছর সতেরোর মেয়েটির নাম বিলকিস খাতুন। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর সমুদ্রপুরের মেনা সরজিনী পাহাড় হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির আপাত লাজুক ছাত্রীর চোখ দু’টোয় অসম্ভব ধার, গলায় শান্ত দৃঢ়তা—‘‘অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া অপরাধ। সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমার বাড়ির লোকেরা যদি আমাকে ত্যাজ্য করে তা হলে সেই অবস্থার সামনে দাঁড়াতে আমি প্রস্তুত।’’

বছর দেড়েক আগে নিজের বিয়ে রুখে দিয়েছিল এই নাবালিকা মেয়ে। তখন সে সদ্য মাধ্যমিক পাশ করেছে। পর পর তিন বোন। হতদরিদ্র বাবা ফারুখ আহমেদ আর মা তাইরিমা বিবি বড় মেয়ে বিলকিসকে দিয়ে দিয়েছিলেন মামাবাড়িতে। সেই মামা সফিকুল মণ্ডলের পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করতে বেঁকে বসে সে। স্কুলে খবর দেয়। বিডিও অফিস থেকে লোক এসে বিয়ে বন্ধ করে। গরিবের মেয়ের এ হেন ‘সাহস’ আর ‘গর্হিত অপরাধ’-এ পরিবারের সদস্যরা এমনকী, নিজের বাবা-মা তার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে একঘরে করে দিয়েছে। খাবার, টাকাপয়সাও দেয় না। তবু বিলকিসকে দমানো যায়নি, ভয় দেখানো যায়নি। বিলকিসকে সমর্থন করায় তার দিদার দায়িত্ব থেকেও হাত ঝেড়ে ফেলেছে পরিবারের বাকিরা। একই ভিটেয় আলাদা ঘরে শয্যাশায়ী দিদা-কে সঙ্গে নিয়ে নতুন যুদ্ধ শুরু করেছে সপ্তদশী। পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। হাতমেশিনে সায়া তৈরি করে বিক্রি করে নিজের আর দিদার খরচ চালায়। আর পাশে পেয়েছে স্কুলকে। শিক্ষকরা তার টিউশনের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন। আর বিডিও অফিসে কথা বলে চালের ব্যবস্থা করে দিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত। জেলার সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তাই জানাচ্ছিলেন, আজকাল হামেশাই বিভিন্ন জেলা থেকে নাবালিকার বিয়ে আটকানোর খবর মেলে। কিন্তু এর মধ্যে সত্যি কত জনের বিয়ে কত দিন পর্যন্ত আটকে রাখা যায় তার একটা সমীক্ষা হওয়া উচিত। কেন না অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কিশোরীর উপর পরিবার থেকে শাসানি চলে এবং মেয়েরা আত্মসমর্পণ করে।

আরও পড়ুন: মেয়ে বলে স্বীকৃতি চেয়ে আর্জি মেয়েদের দিনে

বিলকিসের মতো হিম্মত দেখাতে পারে না খুব বেশি জন। সাহসী মেয়ে পুলিশ হতে চায়। অনায়াসে বলে, ‘‘রাখী দিদিমণি, নন্দিতা দিদিমণি, হেড স্যর অঞ্জন মুখোপাধ্যায়, আমার বন্ধু অন্তরা, রুনা সব্বাই বলেছে ‘বিলকিস তুই পড়, আমরা তোর পাশে আছি।’ আমার ভয় নেই, লড়ে নেব।’’ মেয়ের তেজে স্বপ্নগুলো ঝলসে ওঠে!

অন্য বিষয়গুলি:

Women's Day Women's Day Special
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE