Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Kaliachak Murder

পাশে থাকার লড়াই! মর্গে নাবালিকার দেহ, বিজেপি এবং সিপিএমের হাতাহাতি, চুলোচুলি কালিয়াচকে

বিজেপি এবং সিপিএমের নেতা-নেত্রীর দাবি, মৃতা নাবালিকার পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকার জন্য মর্গে হাজির হয়েছিলেন তাঁরা। তবে তা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।

An image of BJP MLA and CPM Leader

মালদহের বিজেপি বিধায়ক গোপাল সাহার বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন সিপিএমের মহিলা সমিতির নেত্রী রুনু কুন্ডু। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালিয়াচক শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:১৯
Share: Save:

মালদহের কালিয়াচকে উদ্ধার নাবালিকা ছাত্রীর দেহ ঘিরে রাজনীতির অভিযোগ উঠল বিজেপি এবং সিপিএমের মহিলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ময়নাতদন্তের জন্য দেহটি মর্গে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই হাতাহাতি, চুলোচুলিতে জড়ায় দু’পক্ষ। দু’তরফেরই অবশ্য দাবি, মৃতার পরিবারের পাশে থাকার জন্য মর্গে হাজির হয়েছিলেন তাঁরা। তবে তা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও দেহ উদ্ধারের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালে কালিয়াচক থানার উজিরপুরে একটি ক্ষেত থেকে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয়দের দাবি, ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনা উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে দাবি এলাকার কিছু বাসিন্দার। প্রভাসচন্দ্র মণ্ডল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সকালে খবর পেলাম, কে বা কারা ১৫-১৬ বছরের একটি মেয়েকে গণধর্ষণ করে খুনের পর এখানে ফেলে দিয়েছে। ওই মেয়েটি স্থানীয় বাসিন্দা নয়। আমরা কেউ চিনতে পারিনি, সে কোথাকার মেয়ে। এতে সিবিআই বা সিআইডি তদন্ত হোক। এলাকার মেয়েরা আতঙ্কিত। কেউ গ্রাম থেকে বেরোচ্ছে না। অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হোক। কিছু দিন আগে কালিয়াগঞ্জে গণধর্ষণ হয়েছে। আমাদের এলাকায় সে রকম ঘটনা হল। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।’’

স্থানীয়দের থেকে খবর পেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এফআইআর করেছে কালিয়াচক থানার পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বিজেপি এবং সিপিএমের মহিলা সংগঠনের নেত্রীরা। মহিলাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মালদহের বিজেপি বিধায়ক গোপাল সাহার বিরুদ্ধে।

বামনেত্রী তথা সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির মালদহ জেলার সেক্রেটারি রুনু কুন্ডুর দাবি, ‘‘আমরা ওই মৃত মেয়েটির পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এসেছিলাম। দেহ আসার আগেই মর্গে ঢুকেছিলাম আমরা। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এফআইআর করেছে। তাতে মেয়েটির দেহে আঘাতের কথা বা খুন হয়েছে কি না, তার উল্লেখ ছিল না। ওই এফআইআরের ভুল ঠিক করাচ্ছিলাম। পুলিশের ডায়েরিতে ওই কথাগুলি যাতে উল্লেখ করা থাকে, সেই চেষ্টা করেছিলাম। পুলিশ জানিয়েছে, মেডিক্যাল অফিসার দেহ পরীক্ষার পর তা উল্লেখ করলে সেগুলির কথা রিপোর্টে জানানো হবে। তবে এই কথাবার্তার মধ্যে বিজেপির লোকজন এসে উপস্থিত হয়। আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছেন বিজেপির বিধায়ক এবং তাঁর সঙ্গে আসা দু’তিন জন মহিলা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপির লোকজন মর্গে ঢুকে রাজনীতি করছেন।’’

সিপিএমের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন মালদহের বিজেপি বিধায়ক গোপাল। তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ একটা সাদা কাগজে মৃতার পরিবারের সদস্যদের সই করাতে বাধ্য করে। তার প্রতিবাদ করায় সিপিএমের মহিলারা আমাদের অকথ্য ভাষায় কটূক্তি করেন। সিপিএমের মহিলা সমিতির নেত্রীরা ময়নাতদন্তের ঘরে এসে রাজনীতি করছেন। মৃতা যে বিধানসভা এলাকার সেখানকার জনপ্রতিনিধি আমি। মৃতার পরিবারের পাশে থাকা এবং খুনির শাস্তির ব্যবস্থা করা আমার দায়িত্ব।’’

নাবালিকা ছাত্রীকে খুন করা হয়েছে কি না, তা বোঝা যায়নি বলে জানিয়েছেন মালদহ জেলার পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে পরিষ্কার হবে। যে এলাকায় দেহ পাওয়া গিয়েছে, সেটি মৃতার বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। এটি খুন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মেয়েটিকে খুন করা হলে অথবা তা কী ভাবে করা হয়েছে, সেটিও ময়নাতদন্তের পর বোঝা যাবে। তবে মৃতার দেহের আশপাশে বেশ কিছু প্রমাণ মিলেছে, সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

নাবালিকার দেহ উদ্ধারে ঘটনায় পুলিশি তদন্তের উপর আস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুল রহিম বক্সী। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে পুলিশের উপর ভরসা রয়েছে। পুলিশ আধিকারিকেরা তদন্ত করছেন। যাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kaliachak Murder kaliachak BJP CPM scuffle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE