অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলায় রায় কলকাতা হাই কোর্টের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস মামলায় হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার রায় দিল, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দক্ষ আধিকারিককেই যেন এই ধরনের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যা তথ্য-নথি চাওয়া হয়েছে, তা আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে তাঁকে জমা দিতে হবে। হাই কোর্টের আশা, সেই তথ্য এবং নথি যাচাই করে নিরপেক্ষ ভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে ইডি। তদন্তকারী সংস্থা যে তথ্য দেবে, তার গোপনীয়তা বজায় রাখা নিশ্চিত করবে সিঙ্গল বেঞ্চ।
এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তদন্তে ইডি যে তথ্য এবং নথি চেয়েছে, তা উপেক্ষা করা যায় না। তবে আদালত আশা করছে, তথ্য এবং নথির যাচাই করার জন্য দক্ষ অফিসারকেই ইডি দায়িত্ব দেবে। এমন অফিসার তদন্ত করবেন যাঁর আর্থিক লেনদেন (মানি লন্ডারিং) সংক্রান্ত বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তথ্য এবং নথি না দিলে তার প্রভাব ‘সাংঘাতিক’ হতে পারে। এমনকি, এ নিয়ে জনসাধারণের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। আদালত সংবিধান দ্বারা আবদ্ধ। আমরা আশা করব, ইডি সঠিক পথে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অভিষেককে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার তথ্য চেয়ে সমন পাঠানো হয়েছে। তিনি ওই সংস্থায় দু’বছর ডিরেক্টর ছিলেন। বর্তমানে অভিষেক ওই সংস্থার সিইও। ওই সংস্থার চিফ অপারেটিং অফিসারের কাছ থেকে প্রচুর টাকা উদ্ধার হয়েছে। তিনি এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন। ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘‘অভিষেক এক জন সাংসদ। তিনি তথ্য এবং নথি প্রকাশ করলে তাতে অসুবিধার কিছু নেই। তাঁর আইনজীবীও এক সপ্তাহের মধ্যে সব নথি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। আমরা বলছি, আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে ইডিকে সব নথি দিন অভিষেক। ১৯ মাস ধরে এই তদন্ত চলছে। তদন্ত আরও বিলম্বিত হলে কারও জন্য তা সুখকর নয়।’’
আদালত জানিয়েছে, অভিষেক নথি জমা করার পর সব নথি খতিয়ে দেখবে ইডি। তার পরে যদি প্রয়োজন হয়, তবে অভিষেককে তারা ৪৮ ঘণ্টা আগে সমন পাঠাবে। বলার প্রয়োজন নেই যে, ইডি নিরপেক্ষ ভাবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। আইন মেনে তারা উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে। হাই কোর্ট বলে, ‘‘আমরা আশা করছি, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই তদন্ত শেষ হবে। সকলকে সম্মান জানিয়েই বলছি, তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে অভিষেককে। তাই আশা রাখছি, ইডি ডাকলে তিনি যাবেন। যদিও ইডি তাঁকে ১৯ থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে ডাকতে পারবে না।’’
আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘সিঙ্গল বেঞ্চের ‘কোর্ট মনিটরিং’ তদন্তের বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যবেক্ষণ, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করবে না সিঙ্গল বেঞ্চ। আদালতের উচিত স্বচ্ছ, দ্রুত, নিরপেক্ষ এবং নির্ধারিত সময়ে যাতে তদন্ত শেষ হয়, তা নিশ্চিত করা। এটা মনে রাখতে হবে, কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা মন্তব্য মামলার বিচারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। চেষ্টা করা উচিত, তদন্ত থেকে কী বেরিয়ে এল, আদালতের তা দেখা উচিত। কিন্তু এই মামলায় তাৎক্ষণিক ভাবে সিঙ্গল বেঞ্চ নিজের এক্তিয়ার লঙ্ঘন করেনি।’’ আদালত এ-ও জানিয়েছে, পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় ইডি সঠিক রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। অথচ তারা স্বীকার করেছে যে, স্বচ্ছ তদন্তের জন্য ওই তথ্য প্রয়োজনীয়। আমরা আশা এবং বিশ্বাস করছি যে, ইডি যে তথ্য দেবে তার গোপনীয়তা বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করবে সিঙ্গল বেঞ্চ। না হলে তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এবং তদন্ত চলাকালীন তা কারও বিরুদ্ধে যেতে পারে। ইডিকে নিশ্চিত করতে হবে তদন্ত চলাকালীন তাদের দেওয়া সব তথ্য গোপন থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy