এক দফা ভুল নিয়ে অভিযোগের মামলায় ডব্লিউবিসিএস অফিসার নিয়োগই থমকে গিয়েছে। সেই ভুলেরও আগে ভুল আছে বলে নতুন মামলা করেন এক পরীক্ষার্থী। সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, নম্বর বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়ার আবেদন নিয়ে ওই পরীক্ষার্থী আবার আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।
২০১৬ সালের ডব্লিউবিসিএসের নিয়োগ পরীক্ষায় ৬৭ জন সফল প্রার্থীর নিয়োগপত্র পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালতের নির্দেশে গত অক্টোবর থেকে নিয়োগপত্র দেওয়ার কাজ বন্ধ। অন্য একটি মামলা তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা নিয়েই। আদালত অবমাননার অভিযোগে সেই মামলাটি করা হয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-এর বিরুদ্ধে। দু’টি মামলাই করেছেন রাণা প্রতাপ সিংহ নামে হাওড়ার বালি এলাকার এক বাসিন্দা। ওই দু’বছরেই ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দেন তিনি।
শুক্রবার ২০১৫ সালের মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি সহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে। আদালতে রাণা প্রতাপ নিজেই সওয়াল করেন। মামলার নথি দেখে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, তিনি কত নম্বর পেয়েছেন, পিএসসি তাঁকে তা জানিয়ে দিয়েছে। রাণা প্রতাপ কম নম্বর পেয়ে থাকলে কর্তৃপক্ষকে তা বাড়িয়ে দিতে হবে— এমন কোনও নির্দেশ হাইকোর্ট এর আগে পিএসসি-কে দেয়নি। সেই জন্য নম্বর বাড়ানোর দাবি জানিয়ে ওই আবেদনকারী নতুন মামলা করতেই পারেন।
ওই প্রার্থীর অভিযোগটা কী?
রাণা প্রতাপ জানান, ২০১৫ সালের মে মাসে তিনি প্রথম বার ডব্লিউবিসিএস (এগ্জিকিউটিভ) পরীক্ষায় বসে অকৃতকার্য হন। অগস্টে আরটিআই করে তাঁর নিজের উত্তরপত্র এবং এমসিকিউ-এর জন্য পিএসসি-র নিজস্ব উত্তরপত্র চান। পিএসসি তা দিতে না-চাওয়ায় হাইকোর্টে মামলা করেন তিনি। হাইকোর্ট তাঁকে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বা স্যাট-এ যেতে বলে। সেপ্টেম্বরে স্যাট বলে দেয়, এ ভাবে পিএসসি-র কাছ থেকে উত্তরপত্র চাওয়ার এক্তিয়ার নেই পরীক্ষার্থীর।
হাল না-ছেড়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রাণা প্রতাপ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন। দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সব শুনে পিএসসি-কে নির্দেশ দেয়, রাণা প্রতাপকে উত্তরপত্র দিতে হবে। পিএসসি-র উত্তরপত্রে ভুল থাকলে তা শুধরে নিতে হবে। রাণা প্রতাপ বলেন, ‘‘এক সপ্তাহের মধ্যে আমার কাছে উত্তরপত্র পাঠায় পিএসসি। তাতে দেখি, পিএসসি-র নিজস্ব উত্তরপত্রেই ২০০ ছোট প্রশ্নের মধ্যে ১৩টি ভুল থেকে গিয়েছে। আমি ১১৯.৭৫ নম্বর পেয়েছিলাম। ওই ১৩ নম্বর যুক্ত হলে আমার ফাইনাল পরীক্ষায় বসার সুযোগ মিলত।’’
রাণা প্রতাপের দাবি, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সেই ভুল শুধরে নেওয়া হয়নি। উল্টে ২০১৭-র ২৫ এপ্রিল সেই বছরের ডব্লিউবিসিএস গ্রুপ ডি-র ফল প্রকাশ করে দেয় পিএসসি। তাই তিনি পিএসসি-র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে মামলা করেন।
শুধু ২০১৫ সালে নয়, পরের বছরেও পিএসসি ওই একই ভুল করেছে বলে অভিযোগ তুলে আদালতে নতুন একটি মামলা করেন রাণা প্রতাপ। ’১৫ সালে অকৃতকার্য হয়ে দ্বিতীয় বার (২০১৬) পরীক্ষায় বসেন তিনি। সে-বার প্রাথমিকে পাশ করলেও আটকে যান চূড়ান্ত পরীক্ষায়। আদালতে তাঁর আইনজীবী অভিযোগ করেন, ফাইনাল পরীক্ষার ছোট প্রশ্নে পিএসসি-র নিজস্ব উত্তরপত্রে ২৪টি ভুল রয়েছে। পরবর্তী শুনানির আগে পর্যন্ত ২০১৬ সালের নিয়োগ স্থগিত রাখার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। ২০ ফেব্রুয়ারি আবার সেই মামলার শুনানি হবে।
পরপর দু’বছর উত্তরপত্রে ভুল থাকার অভিযোগ নিয়ে মামলা হয়েছে হাইকোর্টে। কী বলছে পিএসসি? ওই সংস্থার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দীপঙ্কর দাশগুপ্তের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব আসেনি। পিএসসি-র সচিব মুকুতা দত্তের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy