রাজীব কুমার। ফাইল চিত্র।
সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে রাজ্যের তিন বর্তমান ও এক অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসারকে তলব করা হয়েছে বলে দাবি করল সিবিআইয়ের একটি সূত্র। তাঁরা হলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল, আইজি (রেল) তমাল বসু এবং কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ। সিবিআই সূত্রের দাবি, সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে ই-মেল করে পাঠানো চিঠিতে ওই চার জনকে আগামী ২৪ অগস্টের মধ্যে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে হাজির হতে বলা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের অবশ্য দাবি, এটা জিজ্ঞাসাবাদ নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, দুই সংস্থার অফিসারেরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। এটা তারই চিঠি। একে জেরা বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এই ঘটনাকে লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের শাসক দলের উপরে কেন্দ্রের চাপ বাড়ানোর কৌশল হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক শিবির। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও এই চিঠিকে কেন্দ্রের চক্রান্ত বলে মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমরা মাথা নোয়াব না। বাঘের বাচ্চার মতো লড়াই করব।’’
কেন তলব করা হচ্ছে ওই চার পুলিশকর্তাকে? সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তারা সারদা-তদন্ত হাতে নেওয়ার আগে রাজ্য পুলিশই ওই ঘটনার তদন্ত করছিল। সেই সময় রাজ্য পুলিশ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করে বলে সিবিআই গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। কিন্তু সেই সব নথি সিবিআই হাতে পায়নি। রাজ্য পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়েও জবাব মেলেনি। সেই কারণেই রাজীব কুমারদের ডেকে পাঠিয়ে জেরা করতে চাওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাবার ভ্যান ব্রেক কষেছে, জীবনের ট্র্যাকে স্বপ্নের সোনাজয়ী লাফ ‘পুচু’র
২০১৩-র এপ্রিলে কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন ও তাঁর সংস্থার অন্যতম কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল বিধাননগর পুলিশ। প্রথমে বিধাননগরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়। পরে সিআইডি এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারদের নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠিত হয়। সেই টিমেরও নেতৃত্ব দেন রাজীব কুমার। বিনীত গোয়েল ও তমাল বসু সে সময় সিআইডি-র পদস্থ কর্তা হিসেবে সিট-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লালবাজারের তৎকালীন গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে যুক্ত ছিলেন পল্লবকান্তি ঘোষও।
সিবিআই তদন্তকারীদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্যের শাসক দলের বেশ কিছু নেতা তাঁদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন বলে জেরার সময় দাবি করেছেন সুদীপ্ত ও দেবযানী। জানিয়েছেন, সেই সব লেনদেনের বহু ভাউচার সারদার বিভিন্ন অফিসে রাখা ছিল। এ ছাড়া, সল্টলেকের মিডল্যান্ড পার্কের অফিসের একটি ফোটো আর্কাইভে রাখা ছিল সারদা-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তাঁদের অসংখ্য ছবি। কিন্তু সে সব কিছুই হাতে পায়নি সিবিআই। রাজীব কুমারদের কাছে কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা জানতে চান, সিট ওই সব নথি বাজেয়াপ্ত করেছিল কি না? করলে সেগুলি কোথায় রাখা আছে? সিবিআইয়ের এক কর্তার দাবি, ‘‘এর আগে সিট-এর কয়েক জন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এই চার জনকে তলব করা হয়েছে।’’
রাজ্যের পুলিশকর্তারা হাজিরা দেবেন কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। বছরখানেক আগে রাজীবকে একাধিক বার চিঠি দিয়ে তলব করেছিল সিবিআই। তিনি হাজিরা দেওয়ার বদলে পাল্টা চিঠি পাঠিয়ে ছিলেন। বীরেন্দ্র, রাজীব ও বিনীত এ দিন ফোন ধরেননি, এসএমএসেরও জবাব দেননি। পল্লববাবুর মোবাইল বন্ধ ছিল। তমালবাবুর সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি। সিবিআইয়ের বক্তব্য, পুলিশকর্তারা সহযোগিতা না করলে তারা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy