টেন্ডার ডাকা হয়নি। সিকিওরিটি ডিপোজিট কিংবা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টিও নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। কার কথায় এ ভাবে সারদার ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে আইআরসিটিসি (ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন) চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, কর্পোরেশনের কাছে তা জানতে চাইল সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো ও রেল-সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের অফিসে আইআরসিটিসি’র দুই অফিসারকে ডেকে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জেরা পর্ব চলে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে।
চার বছর আগে, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আইআরসিটিসি-র সঙ্গে ওই চুক্তিটি করেছিল সারদা গোষ্ঠীর ভ্রমণসংস্থা (সারদা ট্যুরস্ অ্যান্ড ট্রাভেল্স), যার সুবাদে তারা আদতে আইআরসিটিসি-র ‘ভারততীর্থ’ প্রকল্পের এজেন্ট নিযুুক্ত হয়। স্থির হয়, আইআরসিটিসি’র তরফে সারদা ট্যুরস্-ই ভারততীর্থের গ্রাহক জোগাড় করে তাঁদের ট্রেনে চড়িয়ে ঘোরাবে। দক্ষিণ ভারতে সারদা তিন বার লোকজনকে এ ভাবে ঘুরিয়েও নিয়ে এসেছিল। প্রকল্পটি বেশি দিন চলেনি।
এবং চার বছর বাদে সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পেরেছে, সারদার সঙ্গে চুক্তি করতে গিয়ে কার্যত কোনও নিয়মই মানা হয়নি। টেন্ডার ছাড়া, কোনও রকম জামানতের বালাই না-রেখেই সারদা ট্যুরস্-কে ভারততীর্থের ‘ট্যুরিস্ট-এজেন্ট’ হিসেবে কার্যত একতরফা ভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ। পাশাপাশি সিবিআই-সূত্রের দাবি, চুক্তিটির অন্যায্য ফায়দাও তুলেছে সারদা। ভারততীর্থের এজেন্ট হিসেবে পাওয়া রেলের নাম, লোগো ইত্যাদি ভাঙিয়ে তারা গ্রাম-গঞ্জের আমজনতার বিশ্বাস অর্জন করে প্রচুর আমানতও জোগাড় করেছিল।
এ হেন প্রেক্ষাপটে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নেমেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে চাইছেন, সারদার সঙ্গে ওই চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও মহল প্রভাব খাটিয়েছিল কি না। এই কারণেই আইআরসিটিসি’র দুই অফিসারকে তাঁরা তলব করেছিলেন। এ দিন সন্ধে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ কর্পোরেশনের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (পর্যটন) ও এক জন সুপারভাইজার (পর্যটন) সল্টলেকে সিবিআই অফিসে যান। ঘণ্টাখানেক ধরে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁদের কাছে কী জানতে চাওয়া হয়েছে?
ব্যুরো-সূত্রের খবর, দুই অফিসার সারদা সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি গোয়েন্দাদের হাতে জমা দিয়েছেন। সঙ্গে দিয়েছেন ভারততীর্থের এজেন্ট হিসেবে সারদা ট্যুরস্ পরিচালিত তিনটি ভ্রমণ প্যাকেজের যাবতীয় তথ্য। তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়, কার নির্দেশে টেন্ডার-জামানত ছাড়াই সারদা ট্যুরসের মতো লোকসানে চলা এক সংস্থার সঙ্গে আইআরসিটিসি চুক্তি করেছিল? এ ব্যাপারে কেউ কোনও লিখিত নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন কি না, গোয়েন্দারা তা-ও জানতে চেয়েছেন। চুক্তির পরে সারদার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন কী ভাবে আইআরসিটিসি-র লোগো ব্যবহার করলেন, এবং সেটা গোচরে আসার পরেও আইআরসিটিসি কোনও ব্যবস্থা নিল না কেন, দুই অফিসারের কাছে তদন্তকারীরা তারও ব্যাখ্যা চেয়েছেন। সিবিআইয়ের দাবি, বিষয়টি নিয়ে তারা এ বার দিল্লিতে আইআরসিটিসি-র সদরে যোগাযোগ করবে।
জেরায় কী তথ্য উদ্ধার হল? সিবিআই-সূত্রে ইঙ্গিত মেলেনি। সিবিআই অফিস থেকে বেরিয়ে আইআরসিটিসি’র দুই অফিসারও মুখ খোলেননি। তাঁরা প্রায় চুপিসাড়েই বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। এক জনের গলায় ঝোলানো পরিচয়পত্র দেখে জানা যায়, তাঁরা আইআরসিটিসি-র লোক। সারদা-তদন্তে এর আগেও এক দিন আইআরসিটিসি-অফিসারদের ডেকেছিল সিবিআই।
সে দিনও সারদা চুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছিল। সে দিন আইআরসিটিসি’র তরফে চুক্তিপত্রের প্রতিলিপি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy