সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে কারা লাভবান হয়েছেন, সেই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিতে গিয়ে অন্যান্য লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধেও তদন্ত চালাতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তদন্তকারীদের সন্দেহ, সারদার মতো রোজভ্যালির বিপুল অঙ্কের টাকা নয়ছয়েও বৃহত্তর ষড়যন্ত্র ছিল। সেই ষড়যন্ত্রের স্বরূপ সন্ধানে এ বার তদন্ত শুরু করছেন তাঁরা।
তদন্তকারীদের সূত্রের খবর, এই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সিবিআই নতুন দু’টি এফআইআর করে তদন্তে নামছে। এর আগে সারদা কাণ্ডে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্তে নেমে রাজ্যের এক মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। ওই মামলায় আরও কিছু নেতার নামও জড়িয়ে গিয়েছে।
তদন্তকারীদের ধারণা, রোজভ্যালি বাজার থেকে যে-বিপুল অঙ্কের টাকা তুলেছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সেই অর্থ বেশ কিছু রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে গিয়েও পৌঁছেছে। বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্তে এ বার সেই সব নামও উঠে আসবে। তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার সময়ে শীর্ষ আদালত ওই প্রভাবশালীদের খুঁজে বার করার উপরে বিশেষ জোর দিয়েছিল।
রোজভ্যালির টাকা নয়ছয়ের ব্যাপারে তৎপর হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-ও। তারা এর আগে রোজভ্যালি নিয়ে তদন্তে নামলেও সেই তদন্ত এত দিন ছিল মূলত সেবি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া)-র করা একটি অভিযোগের ভিত্তিতে। সেবি জানিয়েছিল, বাজার থেকে বেআইনি ভাবে ডিবেঞ্চার মারফত ১২ টাকা ৮০ লক্ষ টাকা তুলেছে রোজভ্যালি। বস্তুত, সেই মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই লগ্নি সংস্থার মালিক গৌতম কুণ্ডুকে। সেই মামলায় চার্জশিট এবং অতিরিক্ত চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। পরে জানা যায়, সেবি টাকার যে-অঙ্কের কথা জানিয়েছিল, সেটা খুবই সামান্য আসলে তার বহু গুণ বেশি টাকা নয়ছয় হয়েছে রোজভ্যালিতে। টাকার অঙ্কে সেই কেলেঙ্কারি সারদার চেয়েও বড় বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ।
এই অবস্থায় শুধু সেবি-র অভিযোগের উপরে ভিত্তি করে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রমাণ করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাই ওই সংস্থার প্রায় তিন হাজার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখছে ইডি। যাঁরা রোজভ্যালিতে টাকা রেখেছিলেন, সেই আমানতকারীদের কয়েক জন ইডি-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত করছে ইডি। তদন্তকারীদের মতে, সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বাজার থেকে বেআইনি ভাবে তোলা টাকা রোজভ্যালি থেকে কাদের কাছে গিয়েছে, এ বার সেটাই বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, রোজভ্যালির কাছ থেকে যাঁরা বড় অঙ্কের টাকা নিয়েছেন, তাঁরাই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করতে পারেন।
সেই প্রাপকদের খুঁজতে গিয়ে মাথায় হাত পড়েছে অফিসারদের। তিন হাজার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ লেনদেনের খতিয়ান! এবং সেই সব অ্যাকাউন্ট ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। কে, কবে, কখন রোজভ্যালি থেকে মোটা টাকা নিয়েছেন, তা খুঁজে পেতেই হিমশিম অবস্থা ইডি অফিসারদের। অনেকের কাছেই যে ১০ লক্ষ বা তার চেয়েও বেশি অঙ্কের টাকা গিয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে। ওই সব প্রাপককে খুঁজে বার করতে এ বার জনসাধারণের কাছে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইডি। সেই সঙ্গে যাঁরা বিভিন্ন সময়ে রোজভ্যালির কাছ থেকে ১০ লক্ষ বা তার বেশি টাকা নিয়েছেন, তাঁদের যাবতীয় তথ্য-সহ ইডি-র কলকাতা দফতরে দেখা করতে বলা হচ্ছে। সেই মর্মে নোটিসও দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু এই ধরনের নোটিসে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, যাঁদের কাছে টাকা নেওয়ার যথার্থ কারণ ও ঠিকঠাক তথ্য রয়েছে, এই নোটিসে শুধু তাঁরাই তো সাড়া দেবেন। যাঁদের কাছে যথাযথ তথ্য নেই অর্থাৎ টাকা নেওয়ার সঙ্গত কারণ নেই, তাঁরা আগ বাড়িয়ে ইডি দফতরে হাজিরা দেবেন, এমনটা আশা করা যায় কি? তাঁদের নাগাল মিলবে কী ভাবে?
তদন্তকারীরা বলছেন, যাঁরা আসবেন, তাঁদের তথ্য ঘেঁটে সামান্য কোনও ফাঁকফোকর খুঁজে পেলেই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দাঁড় করানো সহজ হবে। সেই তদন্তে নেমে তখন ডাকা যাবে রাঘববোয়ালদেরও।
আর ইডি-র আবেদন সত্ত্বেও কেউ যদি আদৌ সাড়া না-দেন?
সে-ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছে ইডি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy