Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বিদ্যুৎ চুরি রুখতে আলাদা থানা চায় কেন্দ্র

বিদ্যুৎ চুরি রুখতে গিয়ে কলকাতায় নজরুল ইসলামের খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। তিনি এই ভয়াবহ ঘটনায় দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘মমতাদিদির কাছে বিদ্যুৎ চুরি রুখতে বিশেষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২৬
Share: Save:

বিদ্যুৎ চুরি রুখতে গিয়ে কলকাতায় নজরুল ইসলামের খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। তিনি এই ভয়াবহ ঘটনায় দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘মমতাদিদির কাছে বিদ্যুৎ চুরি রুখতে বিশেষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এর জন্য প্রতিটি জেলায় আলাদা থানা তৈরি করুক রাজ্য সরকার। থানাগুলি ২৪ ঘন্টা শুধু বিদ্যুৎ চুরি আটকানোর জন্যই কাজ করবে।’’

পীযূষ বলেন, এর ফলে বার্তা যাবে সরকার বিদ্যুৎ চুরি আটকাতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা নয়। উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যে চুরি বেশি হয়। সরকার দেশ জুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, পশ্চিমবঙ্গে আগে কম বিদ্যুৎ চুরি হতো। এখন তা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের উপর দোষারোপ করতে চাই না। এই বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যকে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।’’ এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে অর্থ সাহায্যও করতে পারে বলেও জানিয়েছেন পীযূষ।

গত শুক্রবার রাতে মেটিয়াবুরুজে বিদ্যুৎ চুরির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৪৭ বছরের নজরুল ইসলামকে প্রাণ দিতে হয়। মেটিয়াবুরুজের লিচুবাগান বস্তির বাসিন্দা নজরুলকে বাঁশ ও রড দিয়ে পিটিয়ে, পাথর দিয়ে থেঁতলে মেরে ফেলা হয়। নজরুল বেআইনি হুকিংয়ের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর যুক্তি, ২০০৩-এর ইলেকট্রিসিটি আইন অনুযায়ী বিদ্যুৎ চুরি মোকাবিলার জন্য পৃথক থানা তৈরি করা যেতে পারে। ওই আইনের ১৫১-এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, চুরির তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী পুলিশের হাতে সবরকম ক্ষমতা থাকবে। পীযূষের মতে, হুকিংয়ের কারণে বন্টন সংস্থাগুলির বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়। পৃথক থানা হলে ক্ষতি আটকানো যাবে।

তবে আলাদা থানা গড়ে আদৌ সমস্যা মেটানো যাবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অনেক রাজ্য। তাদের যুক্তি, বিদ্যুৎ বন্টন ব্যবস্থার জাল এত ব্যাপক যে জেলা স্তরে একটি থানার পক্ষে চুরি সামাল দেওয়া কার্যত অসম্ভব। আর পশ্চিমবঙ্গের বক্তব্য, এতে লাভের বদলে জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। কেননা, বিদ্যুৎ চুরির জন্য আলাদা থানা করলে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের সমস্যা হতেই পারে। এই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই কেন্দ্রের প্রস্তাব নিয়ে আরও কিছু প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের মতে, হুকিং আটকাতে নতুন বাহিনী হলে তাঁদের নিরাপত্তা নিয়েও সমস্যা আসবে। কেননা, খোদ কলকাতায় যখন হত্যার ঘটনা ঘটছে, তখন জেলাগুলিতে যারা বিদ্যুৎ চুরি আটকাতে যাবেন, তাদের আরও সমস্যার সামনে পড়তে হতে পারে।

কেন্দ্রের প্রস্তাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এখনও রাজি হয়নি। এর আগে মমতা, রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যুৎ দফতরের উপদেষ্টা মনীশ গুপ্ত কেন্দ্রের উদয় প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন। সেখানে রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ নিয়েই আপত্তি ছিল পশ্চিমবঙ্গের। এ ক্ষেত্রেও শোভনদেব বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। সে বিষয়ে কী করা উচিত, তা নিয়ে কেন্দ্র কথা বলছে। পৃথক পুলিশ বাহিনী বা থানা করা যাবে কি না, তা মুখ্যমন্ত্রীর বিচারাধীন বিষয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

electricity theft Centre police stations
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE