খাদ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে জোর বিরোধ বেঁধে গেল নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের।
ইউপিএ জমানা থেকেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার দাবি তুলে আসছে, রাজ্যের ১০০ শতাংশ মানুষকে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অথচ খাদ্য সুরক্ষা বিলে বলা রয়েছে, গ্রামের ৭৫ শতাংশ মানুষ ও শহরের ৫০ শতাংশ মানুষকে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় আনা হবে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের তরফে ফের কেন্দ্রকে চিঠি লিখে একই দাবি জানানো হয়। কিন্তু আজ কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পায়োসান দাবি করেছেন, পুরনো অবস্থান ছেড়ে এক বছরের মধ্যে খাদ্য সুরক্ষা আইন কার্যকর করার কথা জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, পাসোয়ান ভুল কথা বলছেন। পশ্চিমবঙ্গের তরফে এমন কথা বলা হয়নি।
আজ কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য সুরক্ষা আইন নিয়েও আলোচনা হয়। তার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে পাসোয়ান বলেন, “১০০ শতাংশ মানুষকে খাদ্য সুরক্ষা দেওয়ার দাবি জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমাকে চিঠি লিখেছিল। কিন্তু আজকের সম্মেলনে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এক বছরের মধ্যে তাঁরা আইন কার্যকর করবেন। এটাকেই রাজ্যের সর্বশেষ অবস্থান হিসেবে ধরছি।”
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “এই ধরনের কোনও কথাই বলিনি।” তাঁর যুক্তি, কেন্দ্রের প্রস্তাবিত আইনে গ্রাম-শহর মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মাত্র ৬৬ শতাংশ মানুষ খাদ্য সুরক্ষার আওতায় আসবেন। বাকিরা ওই সুবিধা পাবেন না। তিনি বলেন, “হয় রাজ্যের ৯ কোটি মানুষের জন্য খাদ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করুক কেন্দ্র, অথবা ওই আইনের আওতায় না-আসাদের আর্থিক সহায়তা দিক।”
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বক্তব্য, খাদ্য সুরক্ষা থেকে বাদ পড়বেন রাজ্যের ৩ কোটির বেশি মানুষ। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “আইন বলবৎ হলে কেন্দ্র ৩৮ লক্ষ টন খাদ্যশস্য দেবে রাজ্যকে। সব রাজ্যবাসীকে খাবার দিতে প্রয়োজন আরও ২০ লক্ষ টন। আমরা চাই কেন্দ্র ওই বাড়তি খাদ্যশস্য রাজ্যকে দিক। অথবা ওই পরিমাণ খাদ্যশস্যের যে দাম, প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে রাজ্যকে সাহায্য করুক। তা হলেই গোটা রাজ্যের মানুষকে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে পারব।”
ঠিক এক বছর আগে খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করেছিল ইউপিএ সরকার। নিয়ম অনুযায়ী তার পরে এক বছরের মধ্যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও রাজ্য প্রশাসনগুলিকে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওই আইন বলবৎ করতে হয়। এখনও পর্যন্ত ছ’টি রাজ্য ও পাঁচটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ওই আইন চালু হয়েছে। রামবিলাস বলেন, “বহু রাজ্য আরও ছয় মাস থেকে এক বছর সময় চাইছে। কিন্তু আগামী তিন মাসের মধ্যে এই আইন বলবৎ করার বিষয়ে সর্বসম্মতি গড়তে চাইছি আমরা।’’
জ্যোতিপ্রিয়র দাবি, কেন্দ্র আসলে চায় না ওই আইন বাস্তবে রূপায়িত হোক। কারণ কেন্দ্রের ভাণ্ডারে ওই পরিমাণ খাদ্যশস্যই নেই। সব রাজ্যকে খাদ্যশস্য দিতে গেলে যে পরিমাণ শস্যের প্রয়োজন, তা এ দেশেই উৎপন্ন হয় না। তাঁর যুক্তি, আইনের ধারা মেনে ভর্তুকি দিতেও রাজি নয় কেন্দ্র। সুতরাং রাজ্যের আপত্তিকে অজুহাত করে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে চাইছে মোদী সরকার। কারা কারা খাদ্য সুরক্ষার সুবিধা পাবেন, তা কী ভাবে ঠিক হবে, তা নিয়েও আজ আলোচনা হয়। এ বিষয়ে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যগুলিকে অনুসরণ করতে চাইছে কেন্দ্র। রামবিলাস জানান, তফসিলি জাতি-উপজাতিদের এর আওতায় আনা হবে। রিকশাওয়ালা, চা-ওয়ালা, বাড়ির পরিচারক-পরিচারিকা, স্টেশনের কুলির মতো সামান্য রোজগারের পেশায় থাকা মানুষকেও এর আওতায় আনা হবে। তবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীরা এই সুবিধা পাবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy