Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Gangasagar Mela 2024

গঙ্গাসাগর যাওয়ার পথে মুড়িগঙ্গায় বিপজ্জনক চর! মেলা আয়োজনের বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

২০১৩ সালে একটি জাহাজ ডুবে গিয়ে ওই চর তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন গঙ্গাসাগর মেলার কাজ করতে যাওয়াতেই চরটি নজরে এসেছে। জলপথে গঙ্গাসাগরে যাতায়াতের পথেই রয়েছে চরটি।

Chief Minister Mamata Banerjee held a meeting in Nabanna regarding the preparations for Gangasagar Mela

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৫৩
Share: Save:

গঙ্গাসাগরের যাত্রাপথে মুড়িগঙ্গার বুকে জেগে উঠেছে নতুন চর। বুধবার নবান্নের বৈঠকে সে কথা জানতে পারলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাগরদ্বীপে পাড়ি দিতে সেই জেগে ওঠা দ্বীপ আদৌ অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে কি না, সে বিষয়েও জানতে চাইলেন তিনি। বৈঠকে সে বিষয়ে কথা বললেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং পরিবহণ ও সেচ দফতরের সচিবদের সঙ্গেও। বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের বন্দর, উপকূলরক্ষী বাহিনী ও নৌসেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানলেন তিনি। প্রকাশ করলেন উদ্বেগও। কাকদ্বীপ লট-৮ থেকে জলপথে কচুবেড়িয়া যাওয়ার যে চ্যানেল রয়েছে, সেই চ্যানলেই এই চরটি দেখা দিয়েছে।

সাগরের বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বৈঠকে এই চর জেগে ওঠার বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘‘২০১৩ সালে বাংলাদেশের একটি ট্রলার ডুবে গিয়েছিল। সেটিকে কেন্দ্র করে কচুবেড়িয়াতে একটি সিলটেশন দেখা দিয়েছে। সেচমন্ত্রী পার্থবাবু, সচিব, জেলাশাসক— সবাই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘‘সেই জাহাজটি এখনও তোলার কোনও চেষ্টা হয়নি?’’ মন্ত্রী বঙ্কিম জবাব দেন, ফরাক্কা ও আরও একটি জায়গা থেকে ড্রেজার আনানোর চেষ্টা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন তোলেন “আর্মির তো অনেক এক্সপার্ট রয়েছেন। বাংলাদেশের ডুবে যাওয়া জাহাজটিকে তোলা যায় না।’’ সেচ দফতরের সচিবকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলে ডুবে যাওয়া জাহাজটি তুলে ফেলার। তবে সাগরের বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, উলগানাথন জেলাশাসক থাকার সময় জাহাজটি তোলার জন্য চেষ্টা শুরু করলেও, তা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে নৌসেনার সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল।

বৈঠকে হাজির নৌবাহিনীর প্রতিনিধির কাছে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। নৌবাহিনীর আধিকারিক জানান, এই ধরনের কাজ করার জন্য ড্রেজিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া-সহ বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে, তারা এই ধরনের কাজ করে থাকে। তিনি আরও জানান, এই ধরনের সমস্যা হলে কোনও সংস্থা কিংবা বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে কাজ করানো হয়। নৌসেনায় এই সমস্যার সমাধানের জন্য কোনও বিশেষজ্ঞ নেই। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের কাছে জানতে চান, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কাছে কি এই বিষয়ে কোনও সমাধান রয়েছে? তাঁকে জানানো হয়, এটি প্রযুক্তিগত বিষয়। তাই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কাছে কোনও সমাধান নেই। তবে এই বিষয়ে ড্রেজিং কর্পোরেশনকে চিঠি লিখে এই বিষয়ে আবেদন করা যেতে পারে বলেই মুখ্যমন্ত্রীকে জানান আধিকারিকরা।

সব শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তা হলে তো এই বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। এই গঙ্গাসাগর মেলার আগে তা সম্ভব হবে না।’’ তাই প্রশাসনকে বৈঠকেই নির্দেশ দেন, গঙ্গাসাগর মেলা শেষ হলেই জাহাজটি তুলে ফেলার কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এত বছর ধরে জাহাজটি ডুবে থাকা সত্ত্বেও কেন তা নজরে আসেনি।’’ তাঁকে জানানো হয়, গত বছর পর্যন্ত এই চরটি প্রশাসনের নজরে আসেনি। উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই চরটির জন্য কোনও দুর্ঘটনা যেন না ঘটে।’’ সেনাবাহিনীর তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয় যে, যেখানে জাহাজডুবি হয়ে চর জেগে উঠেছে। জায়গাটিকে চিহ্নিত করে দেওয়া হোক। এমনকি রাতেও সেই চিহ্নিত জায়গাটি যাতে বোঝা যায়, তার ব্যবস্থাও করা হোক। তা হলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। মুখ্যমন্ত্রী সেচ দফতরের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন চরটি চিহ্নিত করতে।

অন্য দিকে, প্রতি বছর ৪০ লক্ষ মানুষ গঙ্গাসাগর মেলায় অংশগ্রহণ করেন বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মেলায় থেকে রাজ্য সরকারের তরফে দায়িত্বে থাকবেন মন্ত্রী পুলক রায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসু, প্রদীপ মজুমদার ও গঙ্গাসাগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বঙ্কিম। ৮-১৭ জানুয়ারি গঙ্গাসাগর মেলা চলবে। ১৫ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি। ওই দিন ১২টা ১৩ মিনিট থেকে ১৬ জানুয়ারি ৯টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত পুণ্যস্নানের যোগ। ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে রাজ্য সরকার ২২৫০টি সরকারি বাস চালাবে। পূর্ব রেলের তরফে ৬৬টি অতিরিক্ত ট্রেন চালানো হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE