দক্ষিণ কলকাতার একটি বুস্টার পাম্প স্টেশনের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: প্রদীপ আদক ।
বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে ওঠা বিবিধ অভিযোগ নিয়ে এ বার সরাসরি ওই সব হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইতিমধ্যেই কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ওই সব হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে রোগীদের তোলা নানা অভিযোগের ফাইলও তৈরি করেছে স্বাস্থ্য ভবন। নবান্ন সূত্রের খবর— কেন এই সব অভিযোগ উঠছে, হাসপাতালগুলি সব নিয়মকানুন মানছে কি না এবং এই সমস্যার সমাধান কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি টাউন হলে তলবি বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে হাজির হতে হবে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির কর্তৃপক্ষকে। পরে জেলাগুলিতেও এমন বৈঠক হবে বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর।
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা শুক্রবার বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলি কী করবে, ও কী করবে না, তা নিয়ে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। কোন নির্দেশিকা ভাঙলে কী শাস্তি হতে পারে তার বিধানও রয়েছে। ওই সব নির্দেশিকা বেসরকারি হাসপাতালগুলি মেনে চলে কি না, টাউন হলের বৈঠকে তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের কাছেই জানতে চাইবেন মমতা। শুক্রবার সন্ধ্যায় নবান্ন ছাড়ার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। আগের আমলে সব অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কার কী কাগজপত্র রয়েছে তা-ও দেখতে হবে।’’
রোগী মৃত্যুর জেরে গত বুধবার একবালপুরে সিএমআরআই হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় এক দল লোক। গাফিলতির পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিল করার অভিযোগও ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এর আগেও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের মাত্রাছাড়া বিল করার অভিযোগ জমা পড়েছিল। এর মধ্যেই বিধানসভায় জমা পড়া বেশ কয়েক জন বিধায়কের চিকিৎসার বিল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্পিকার। বিধায়কদের অস্ত্রোপচার, বিভিন্ন পরীক্ষা এবং হাসপাতালের বেড চার্জের বহর দেখে রীতিমতো বিস্মিত স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন। মমতার নির্দেশে চার চিকিৎসকের একটি তদন্ত কমিটি গড়ে দেন স্পিকার। বিলের বহরের সত্যতা যাচাই করে দেখবে ওই কমিটি। ২২ ফেব্রুয়ারির বৈঠকেও এ সব বিষয়গুলি উঠবে বলে স্বাস্থ্য ভবনের খবর।
আরও পড়ুন: ‘ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও আর নয়’
হাসপাতালগুলিকে নিয়মে বাধতে উদ্যোগী হওয়ার পাশাপাশি যে ভাবে গত বুধবার সিএমআরআই হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, তারও কড়া নিন্দা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন সকালে হরিশ পার্কে একটি বুস্টার পাম্প স্টেশনের উদ্বোধনে হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘হাসপাতালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকতে পারে। তা বলে ভাঙচুর কেন? এটা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি।’’ মমতা বলেন, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ভাঙলে টাকা দিয়েও তা দ্রুত পাওয়া যাবে না। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘এটাও বুঝতে হবে নার্সিংহোমেরও সীমিত ক্ষমতা রয়েছে। কোথাও বেডের সংখ্যা রয়েছে হাজার। তা ভর্তি হয়ে গেলে নতুন করে রোগী ভর্তি করা যায় না।’’
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের পরিষেবাই সব থেকে ভাল। রোগীদের উচিত আগে সেখানে যাওয়া।
বুধবারের হাঙ্গামার পরে সিএমআরআই হাসপাতালের রোগী ও তাঁদের পরিবারের উদ্বেগ কিছুমাত্র কমেনি। প্রধান ফটক বন্ধ রাখায় পেছনের দরজা দিয়ে যাতায়াত করা হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা খুবই কম। অনেক রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তার, নার্স ও কর্মীরাও আতঙ্কে। তবে ভাঙচুরের পরে তিন দিন কেটে গেলেও কেন ক্যামেরায় ধরা পড়া হাঙ্গামাকারীদের পুলিশ ধরতে পারল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভাঙচুরের পর পুলিশ সেই রাতেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছিল। তার পর আর কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। লালবাজারের দাবি, তল্লাশি চললেও অভিযুক্তদের হদিস মিলছে না। যদিও বন্দর এলাকার কংগ্রেস
কর্মীদের অভিযোগ, ভাঙচুরে অভিযুক্তেরা রাজ্যের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় পুলিশ তাঁদের আড়াল করছে। তার বদলে নির্দোষ নাগরিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অভিযোগে এ দিন বিকেলে আলিপুর থানায় বিক্ষোভও দেখান বন্দর এলাকার এক দল কংগ্রেস কর্মী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy