মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। — ফাইল চিত্র।
দত্তপুকুরের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। সেই আবহেই সোমবার ছিল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক। বার বার এমন বিস্ফোরণ কেন হচ্ছে, প্রশাসন কেন সতর্ক হতে পারছে না, সেই প্রশ্ন তুলে ওই বৈঠকে উষ্মাপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, বৈঠকে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভের মুখে পড়েন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। বৈঠকে উপস্থিত রাজ্যের এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, গত মে মাসে এগরায় বিস্ফোরণের পরেই মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়েই ছয় দফা পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার চার মাসের মধ্যেই কেন আবার এমন দুর্ঘটনা, তা নিয়েই মূলত ক্ষোভপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার বিধানসভাতেই মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। আধ ঘণ্টারও কম সময়েই শেষ হয়ে যায় বৈঠক। সেখানে মূলত দত্তপুকুরের ঘটনা নিয়েই আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে। এর আগে এগরাকাণ্ডের সময়েও রাজ্য সরকারের মুখ পুড়েছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগের সেই বিস্ফোরণের পর মমতা নিজে এগরায় গিয়েছিলেন। নিজে হাতে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে রাজ্যের সর্বত্র অবৈধ বাজি কারখানা বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছিলেন। আতশবাজির পরিবর্তে রাজ্যে সবুজ বাজির উৎপাদন বাড়াতে পাঁচটি ক্লাস্টার তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছিল। এ জন্য রাজ্য সরকার জমি দেবে বলেও ঠিক হয়। অবৈধ বাজি কারখানার শ্রমিকদের কী ভাবে অন্য কাজ দেওয়া যায়, সে ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা করতে বলা হয়েছিল। এর পরে রাজ্য জুড়ে তল্লাশি অভিযানও চালায় পুলিশ। কিন্তু তার পরেও অনেক জায়গায় অবাধে বাজি তৈরি হচ্ছে। বহু জায়গায় যে বারুদের স্তূপ তৈরি হয়েছে, তা সামনে এনে দিয়েছে দত্তপুকুরের ঘটনা।
এখনও পর্যন্ত ওই বিস্ফোরণে ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী থেকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম গিয়েছেন দত্তপুকুরে। সকলেই রাজ্য সরকারের নিন্দা করেছেন। দত্তপুকুরের ঘটনার ফলে রাজ্য সরকার তো বটেই, দল হিসাবে তৃণমূলও বেশ অস্বস্তিতে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মমতা। জানা গিয়েছে, যে কোনও ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন মমতা। এর পরেই রাজ্য পুলিশ দু’জনকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়। দত্তপুকুরের আইসি শুভব্রত ঘোষ এবং নীলগঞ্জ ফাঁড়ির ওসি হিমাদ্রি ডোগরাকে সাসপেন্ড করা হয়।
প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বিস্ফোরণ হয় গত ১৬ মে। এর পরেই রাজ্যের সর্বত্র সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলে নবান্ন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তখন নবান্নের তরফে নির্দেশে বলা হয়েছিল, রাজ্যের সমস্ত বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ মানুষকে এই ধরনের কারখানায় কাজের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করার পাশাপাশি, বেআইনি বাজি কারখানার কর্মীদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির ব্যবস্থাও করতে হবে।
এক বার বন্ধ করে দেওয়া বেআইনি বাজি কারখানায় যাতে আবার উৎপাদন শুরু না হয়, তা স্থানীয় থানাকে নিশ্চিত করতে হবে বলেও নির্দেশ দেয় নবান্ন। এগরায় মূল অভিযুক্ত ভানু বাগ বিস্ফোরণের পরে ওড়িশার হাসপাতালে মারা যান। তিনি অতীতেও বাজি কারখানা চালাতেন। পুলিশ গ্রেফতার করলেও মুক্তি পেয়েই আবার তিনি বাজির কারবার শুরু করে দেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে নবান্ন স্পষ্ট জানিয়েছিল, বেআইনি বাজি প্রস্তুতকারকেরা যাতে আবার একই কাজ না করেন, তা দেখতে হবে স্থানীয় থানাকেই। কিন্তু দত্তপুকুরের ঘটনায় দেখা যায় কারখানার মালিক কেরামত আলি অতীতে গ্রেফতার হলেও মুক্তি পাওয়ার পরে আবার বাজি তৈরি শুরু করেন। গত ১৮ মে জেলায় জেলায় নবান্নের তরফে নির্দেশ পাঠানো হলেও কাজের কাজ যে বিশেষ হয়নি, তারই প্রমাণ মেলে দত্তপুকুরের দুর্ঘটনায়। আর এ নিয়েই প্রশাসনের উপরে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। যা তিনি সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রকাশ করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy