Advertisement
০৬ মে ২০২৪

‘ওই যে বলেছিল না, ছেলে ঢুকিয়ে দেব! এ বার তো নিজেই ঢুকে গেল!’

টিভি আছে, তবে তাতে হাত পড়ে কদাচিৎ। সেই টিভি, এ দিন ভরদুপুরে গাঁক করে উঠল। লাল ফিতের মতো ক্রল, থেকে থেকেই ফ্ল্যাশ— ‘রোজ ভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার করা হল কৃষ্ণনগরের সাংসদ...।’

সিবিআই দফতরে ঢোকার আগে স্ত্রী নন্দিনীর সঙ্গে তাপস পাল। শুক্রবার শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

সিবিআই দফতরে ঢোকার আগে স্ত্রী নন্দিনীর সঙ্গে তাপস পাল। শুক্রবার শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১০
Share: Save:

টিভি আছে, তবে তাতে হাত পড়ে কদাচিৎ।

সেই টিভি, এ দিন ভরদুপুরে গাঁক করে উঠল। লাল ফিতের মতো ক্রল, থেকে থেকেই ফ্ল্যাশ— ‘রোজ ভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার করা হল কৃষ্ণনগরের সাংসদ...।’

পার্কের গায়ে দোতলা ছিমছাম বাড়ি। মধ্য ষাট ভদ্রলোক জানাচ্ছেন, কলকাতার ভবানীপুরেই তাঁর ডেরা। শীত পড়লে, কৃষ্ণনগরের পৈতৃক বাড়িতে কটা দিন কাটিয়ে যান।

তিনি সুভাষচন্দ্র বসু, কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পালের বাড়িওয়ালা।

ক্ষৌণীশ পার্কের গায়ে সুভাষবাবুর তেতলা বাড়ির ছাদের ঘরটা দলের কর্মীরা তাপস পালের জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন। শীতের ছুটি কাটাতে এ বার সে বাড়িতে এসে সুভাষবাবু বলছেন, ‘‘টিভি তো তেমন দেখি না, এ দিন দুপুরে কলকাতার বাড়ি থেকে ফোন এল—টিভিটা খোল!’’

দেখে তো অবাক! কিঞ্চিৎ বিরক্তও। সুভাষবাবু বলছেন, ‘‘সারদা-রোজ ভ্যালিতে তাপস জড়িত কিনা জানি না। তবে হ্যাঁ, চৌমুহা গ্রামে তাপসের ওই ‘রেপ করিয়ে দেব’ শোনার পরে ওঁর সঙ্গে আর কথা বলতে ইচ্ছা করে না।’’

স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে কথা তাঁরও কোনও দিন হয়নি। তিনি তৃণমূলের চাপড়া এলাকার দাপুটে নেতা। বলছেন, ‘‘চৌমুহায় একবার মুখ পুড়িয়ে ছিলেন। তার পরে এই রোজ ভ্যালি। এত দিন ধরে সিনেমা করে কি কিছুই রোজগার করেননি?’’

অরবিন্দ রোডে, তাপস পালের পার্টি অফিসের সামনে জটলা। মুখ ভার দলীয় কর্মীদের। কখনও সে ভাবে নিজের কেন্দ্রে না আসা, বেফাঁস মন্তব্য কিংবা নিচুতলার কর্মীদের একেবারেই ‘পাত্তা’ না দেওয়ার অভিযোগ ছিলই তাপসের বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুর থেকে কর্মীদের মধ্যে নতুন একটা প্রশ্ন ঘুরছে— তাপস কি সত্যিই রোজ ভ্যালি কাণ্ডে জড়িত?

এক জন নিজেকে সামলাতে পারলেন না। বলে ফেললেন, ‘‘ওই যে বলেছিল না, ছেলে ঢুকিয়ে দেব! এ বার তো নিজেই ঢুকে গেল!’’ খবরটা শুনেই হইহই করে উঠছেন চৌমুহা গ্রামের পরিচিত তৃণূল কর্মী শেখ আলতাফ, ‘‘খোদার মার, জগতের বার! এক বার দোষ করলে খোদার কাছে ছাড় নেই কর্তা!’’ সে গ্রামের বটতলায় দাঁড়িয়ে আসিদা বিবি, টুনি বিবিরা বলছেন, ‘‘ওই অপমান ভুলতে পারিনি জানেন। জানতাম এক দিন শাস্তি পেতেই হবে ওঁকে।’’

সেটা যে এ ভাবে ফলে যাবে, আসিদা বিবিরা না জানলেও আঁচ পেয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদের এক ঘনিষ্ঠ অনুগামী। দিন কয়েক আগে ঘণ্টা কয়েকের জন্য, কৃষ্ণনগর বইমেলায় এসেছিলেন তাপস। ফোনটা এসেছিল তখনই। সেই অনুগামীর কথায়, ‘‘সিবিআই-এর ফোনটা পেয়েই মেলার এক কোণে সরে গিয়েছিলেন তাপসদা। অনেককে ফোন

করছিলেন, সত্যি বলছি, আমাদের বুক কেঁপে উঠেছিল তখনই।’’ দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত কিন্তু বিশ্বাস করেন না দুর্নীতির অভিযোগ। ফোনে বললেন, ‘‘এ সবই দিদির বিরুদ্ধে বিজেপি-র প্রতিহিংসা।’’ সরাসরি দোষারোপ করলেন না কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীম সাহাও। চৌমুহার ঘটনার পরে সটান বলেছিলেন, ‘‘তাপসের মন্তব্যের পরে বাড়িতে মুখ দেখাতে পারছি না।’’ সেই অসীমবাবুও কিন্তু এ দিন মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘নোটের বিড়ম্বনায় দেশ ভুগছে। দিদি ছুটে বেড়াচ্ছেন। তা দেখে ভয় পেয়ে সিবিআই লেলিয়ে দিল বিজেপি।’’

জেলায় তাপসের ছায়াসঙ্গী দিগনগর এলাকার অঞ্চলপ্রধান চঞ্চল ঘোষের কপালে ভাঁজ। ‘‘এ বার এলাকার উন্নয়ন হবে কী করে শুনি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tapas Pal Rose Valley chit fund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE