পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত অটো (বাঁ দিকে)। উত্তেজিত জনতাকে হটাতে পুলিশের লাঠিচার্জ। রবিবার খড়্গপুরের সাদাতপুরে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
রক্ষিবিহীন লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা এ বার রেলশহরে।
রবিবার বিকেল চারটে নাগাদ খড়্গপুরের সাদাতপুরের কপোতিয়ায় প্রহরী-বিহীন ওই লেভেল ক্রসিংয়ে একটি অটোয় ধাক্কা মারে ডাউন যশোবন্তপুর-কামাখ্যা এসি এক্সপ্রেস। অটো চালক-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে এক বালিকাও রয়েছে। দুর্ঘটনার পরে কলকাতা-মুম্বই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর হয়। পরে অবরোধকারীদের হটাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ।
এ দিন কপোতিয়া থেকে অটো ভাড়া করে নাতি-নাতনিকে নিয়ে সিজুয়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন আমিনা বিবি (৫৫)। কপোতিয়ায় থেকে নিমপুরার টাটা বিয়ারিং কারখানার কাছে এসে বাস ধরার কথা ছিল তাঁদের। পিচ রাস্তা ধরে নিমপুরায় যাওয়ার পথে প্রহরিহীন লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিমপুরা ছেড়ে গোকুলপুর স্টেশনের দিকে যাওয়ার সময় কামাখ্যাগামী যশোবন্তপুর এসি এক্সপ্রেস ওই অটোয় ধাক্কা মেরে চলে যায়। ছিটকে পড়ে অটোটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অটো চালক অমর বিশুই (২৮) ও আমিনা বিবির। গুরুতর জখম হয় আমিনা বিবির দুই নাতি-নাতনি টুম্পা খাতুন (৯) ও শেখ সোহেল। মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় টুম্পার।
এর পরেই খেপে যান স্থানীয়রা। ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। আটকে পড়ে বহু যানবাহন। স্থানীয়দের অভিযোগ, রেলের উদাসীনতা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। স্থানীয় বাসিন্দা গুড়াই সিংহ, বিষ্ণু নায়েকরা বলেন, “এই লেভেল ক্রসিংয়ে আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাতে তো কিছু বোঝাই যায় না। আমরা চাই অবিলম্বে প্রহরী নিয়োগ হোক।” মৃত টুম্পার বাবা শেখ ফারুকের আক্ষেপ, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে এখানে কোনও রক্ষী নেই। তার মাসুল যে মেয়ের প্রাণ দিয়ে চুকোতে হবে ভাবিনি।’’ মৃত অটো চালক অমরের বৌদি দীপালি বিশুই বলেন, “আমার দেওর বহু বছর ধরে অটো চালাচ্ছে। ওর মতো ছেলে এমন ভুল করবে ভাবতে পারছি না।”
অবরোধ তুলতে সাদাতপুর ফাঁড়ির পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে উল্টে দেয়। শুরু হয় ইটবৃষ্টি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এসে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলেও অভিযোগ। যদিও খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল বলেন, “পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে লাঠিচার্জ হয়নি।”
রেলের খড়্গপুর ডিভিশনে প্রায় ছ’শো প্রহরিবিহীন লেভেল ক্রসিং রয়েছে। কিছুদিন আগে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার এ কে গোয়েল খড়্গপুরে এসে ওই সব রক্ষী-বিহীন ক্রসিং তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তা অবশ্য হয়নি। তবে রেলের তরফে প্রহরী-বিহীন ক্রসিংয়ে মানুষকে সতর্ক করতে অস্থায়ী ভাবে ‘রেলমিত্র’ নিয়োগ করা হয়। যদিও এ দিন দুর্ঘটনার সময় কপোতিয়ার কাছে ওই লেভেল ক্রসিংয়ে রেলমিত্র ছিলেন না বলেই স্থানীয়দের অভিযোগ।
খড়্গপুরের ডিআরএম রাজকুমার মঙ্গলার অবশ্য দাবি, “রেলমিত্র নিষেধ করেছিলেন। একটি মোটরসাইকেল দাঁড়িয়েও গিয়েছিল। কিন্তু ওই অটো চালক দাঁড়ায়নি। তাই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।” খুব দ্রুত এই ধরনের লেভেল ক্রসিংয়ে প্রহরী নিয়োগ হবে বলেও ডিআরএম জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy