উচ্ছেদ করা শ্রী মার্কেটের ১২৭টি স্টল তৈরি হওয়ার কথা এই জায়গাতেই। কিন্তু তা হয়নি ১৩ বছরেও। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
হাওড়া ময়দানে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ প্রায় শেষের পথে। কয়েক মাসের মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর উদ্বোধন হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ফলে, জেলা প্রশাসনে তৎপরতা তুঙ্গে। কিন্তু মেট্রোর কাজের জন্য উচ্ছেদ হওয়া শ্রী মার্কেটের কিছু স্টলমালিককে তাঁদের পূর্ববর্তী জায়গায় ফেরানো নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিন বছরের মধ্যে হাওড়া ময়দানের শ্রী মার্কেটের ব্যবসায়ীদের নিজেদের জায়গা ফিরিয়ে দেওয়ার শর্তে ২০১০ সালে চুক্তি হয়েছিল মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। কিন্তু সেই চুক্তির ১৩ বছর পরেও মার্কেটের ১২৯টি স্থায়ী স্টল তৈরি হয়নি। ফলে মহাত্মা গান্ধী রোডের দু’পাশের ফুটপাতের স্টলগুলি থেকে ব্যবসায়ীদের নিজেদের জায়গা ফিরিয়ে না দেওয়ায় পার্কিং বা বহুস্তরীয় পার্কিংও যথাস্থানে তৈরি করা যায়নি। অন্য দিকে, ময়দান এলাকার ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ, বাস ও ট্যাক্সির বেআইনি স্ট্যান্ড তুলে দেওয়ার দায়িত্ব কে নেবে— তা নিয়েও কোনও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ঝুলে রয়েছে হাওড়া ময়দান এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টিও।
মেট্রো সূত্রের খবর, হাওড়া ময়দানে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। কয়েক মাসের মধ্যেই পরিষেবার উদ্বোধন হতে পারে জেনে কার্যত হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে মেট্রো রেল ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যে। গত শনিবারই হাওড়া পুরসভায় এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণকারী সংস্থা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-সহ জেলা প্রশাসন ও পুরসভার শীর্ষ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর পরে রবিবারেই ময়দান এলাকা পরিদর্শন করেন পুরসভার পদস্থ কর্তারা।
কিন্তু মেট্রোর জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়া শ্রী মার্কেটের ১২৭টি স্টলের মালিকদের তাঁদের পূর্ববর্তী স্থানে স্থানান্তরিত করা নিয়ে মূল সমস্যা দেখা দিয়েছে। ‘শ্রী মার্কেট হকার্স কর্নার ব্যবসায়ী সমিতি’র অভিযোগ, ২০১০ সালে জেলা প্রশাসন, কেএমআরসিএল এবং স্টলমালিকদের মধ্যে যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল, তাতে ঠিক হয় যে, তিন বছরের মধ্যে তাঁদের আগের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আরও ঠিক হয়, চুক্তি মতো কাজ না হলে ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে এবং এককালীন ৫৫ হাজার টাকা প্রত্যেক স্টলমালিককে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেওয়া হবে।
‘শ্রী মার্কেট হকার্স কর্নার ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে দফায় দফায় চিঠি দিয়েছি, জেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছি। কিন্তু কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এখন কয়েক দিন আগে আমাদের ডেকে বৈঠক করা হয়েছে। আমরা মেট্রোর দেওয়া স্টলের মাপ, নকশা সব মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমাদের দাবি, পুরনো জায়গায় স্টল তৈরি করে দিলেও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। না হলে আমরা ফুটপাতের অস্থায়ী স্টল ছাড়ব না।’’
এ দিকে, কয়েক মাসের মধ্যে হাওড়ায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর উদ্বোধন হয়ে গেলে কয়েক হাজার যাত্রীর যাতায়াত বা গাড়ি রাখার ক্ষেত্রে যে সমস্যা হবে, তা মানছেন হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘অস্থায়ী ভাবে ফুটপাতে তৈরি হওয়া স্টল ভেঙে সেখানে পার্কিং লট তৈরি হওয়ার কথা। ওই স্টলমালিকেরা না উঠলে পার্কিং বা মাল্টি লেভেল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা যাবে না। কেএমআরসিএল-এর সঙ্গে কয়েক দিন আগে বৈঠক হয়েছে। স্টলমালিকেরা সম্মতি দিলেই মার্কেট তৈরির কাজ শুরু হবে।’’
মেট্রো সূত্রের খবর, ওই মার্কেট তৈরি করে স্টলমালিকদের পুরনো জায়গায় পাঠাতে সময় লাগবে আরও সাত মাস। তা হলে কি মেট্রোর উদ্বোধনের পরেও শ্রী মার্কেটের ১২৯ জন স্টলমালিকের সমস্যা মিটবে না? হাওড়া ময়দানে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থাও করবে না মেট্রো বা জেলা প্রশাসন? মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘শ্রী মার্কেটের স্টলমালিকদের পুনর্বাসনের ব্যাপারটা দেখা হচ্ছে। তবে রাজ্য সরকারের জায়গায় পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ অন্যান্য কাজ তারাই করবে।’’ আর হাওড়ার জেলাশাসক দীপাপ প্রিয়া পি বলেন, ‘‘দখলদার উচ্ছেদ বা পার্কিংয়ের বিষয়টি কোন দফতর করবে, এখনও ঠিক হয়নি। ঠিক হলে জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy