Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বিদ্রোহেই তৃপ্ত ছেঁড়া চপ্পল ছেড়ে আসা মনোজ

বিপক্ষে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী থাকুন। বা বিধানসভার সর্বময় অভিভাবক স্পিকার থাকুন। মনোজ চক্রবর্তী দমবার পাত্র নন! তাঁর পাশে কেউ থাকুক বা না থাকুক, তিনি লড়ে যাবেন! প্রয়োজনে একাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৫
Share: Save:

শুরুতেও তিনি বিদ্রোহী। শেষেও তিনি বিদ্রোহী!

বিপক্ষে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী থাকুন। বা বিধানসভার সর্বময় অভিভাবক স্পিকার থাকুন। মনোজ চক্রবর্তী দমবার পাত্র নন! তাঁর পাশে কেউ থাকুক বা না থাকুক, তিনি লড়ে যাবেন! প্রয়োজনে একাই। পরিবর্তনের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মহাকরণে যে ইনিংস শুরু হয়েছিল, বর্তমান বিধানসভার শেষ অধিবেশনেও একই ভঙ্গিতে ব্যাট করলেন বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক। যে ইনিংসকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। আর শাসক দলের বিধায়কেরা বলছেন, ‘‘লোকটা ক্ষ্যাপা! কিন্তু কাউকে ছাড়ে না!’’

তৃণমূল এবং কংগ্রেসের জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মন্ত্রী হয়েছিলেন বহরমপুরের মনোজবাবু। তাঁকে না জানিয়েই তাঁর দফতর ছাঁটার প্রতিবাদে মহাকরণে নিজের ঘর থেকে টেলিফোন তুলে মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন, নিজের সীমা না ছাড়াতে। মনোজবাবু বলেছিলেন, কোথায় শুরু এবং কোথায় থামতে হয়, তাঁর জানা আছে! সেই শুরু! তার পরে নতুন সরকারের ৮ মাসের মাথায় মধুচন্দ্রিমা-পর্ব যখন তুঙ্গে, তখনই মহাকরণে আস্তিন গুটিয়ে সেই বিখ্যাত সাংবাদিক সম্মেলন। মহাকরণে কর্মরত পুলিশ থেকে কর্মচারীর ভিড়ে ঠাসা যে সম্মেলনে মনোজবাবু বলে এসেছিলেন, ‘‘ছেঁড়া চপ্পলের মতো মন্ত্রিত্ব ছেড়ে গেলাম!’’

কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তখন প্রবল চাপ ছিল মনোজবাবুর উপরে। তবু মাথা নোয়াননি। পরে তৃণমূলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে জোটই ভেঙে যায় কংগ্রেসের। এর মধ্যে সুযোগ পেলেই বিধানসভায় গলা চড়িয়েছেন মনোজবাবু। এক বার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসনের দিকে কাগজের দলা ছুড়েছেন। অন্তত দু’বার স্পিকার বলেছেন, তাঁকে এটাই শেষ হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে! অকুতোভয় মনোজবাবু সভায় দাঁড়িয়েই স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন!

লড়াই তুঙ্গে পৌঁছেছে বিধানসভার সদ্যসমাপ্ত বাজেট অধিবেশনে। রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কের শেষে মুখ্যমন্ত্রী জবাবি ভাষণে সরকারের এক একটা কাজের ফিরিস্তি দিচ্ছিলেন আর টিপ্পনী কেটে প্রশ্ন তুলছিলেন মনোজবাবু। এক সময়ে রুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী বিদ্রোহী বিধায়কের উদ্দেশে বলে বসেন, তিনি তো সকাল থেকেই খেয়ে রয়েছেন! এমন মন্তব্য ‘অবমাননাকর’ বলে অভিযোগ করে বিধানসভায় একযোগে প্রতিবাদে সরব হন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব। জোটপন্থী মনোজবাবু তাঁর পাশে বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বকে দাঁড়াতে দেখে হেসেছেন। এমনকী, দু-এক জন মন্ত্রী এসেও তাঁকে সহমর্মিতা জানান।

এক সময় দলের ঘোষিত প্রার্থীকে উপেক্ষা করে বহরমপুরে ‘বিদ্রোহী’ মনোজ ও কান্দিতে অপূর্ব সরকারকে জিতিয়ে এনেছিলেন অধীরই। তাঁর সেই সৈনিক আস্থার মর্যাদা দিতে পারায় অধীর এখন বলছেন, ‘‘মনোজ চক্রবর্তী এমন একটা লোক, যে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না। যাকে খরিদ করা যায় না, ম্যানেজ করা যায় না! রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীরা ওঁকে ভালবাসেন।’’ আর মনোজ? তিনি বলছেন, ‘‘পাঁচটা বছর যা করেছি, ওটাই আমার স্বাভাবিক কাজ। আমি গর্বিত যে, কোথাও আপস করিনি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manoj Chakraborty congress assembly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE