শুরুটা করে দিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি-র সভাপতি অমিত শাহ। সেই সুরই এ বার তুলে নিল বামেরাও। সারদা-কাণ্ডে কলকাতার রাজপথে সিপিএমের ছাত্র, যুব, মহিলা ও শ্রমিক সংগঠনের মিছিলে সোমবার শোনা গেল ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, মমতা ব্যানার্জি চোর হ্যায়’ স্লোগান! সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করতে চেয়ে তাঁকে ‘দেশদ্রোহে’ মদত দেওয়ার অভিযোগে কাঠগড়ায় তোলা যায় কি না, সেই প্রশ্নও তুলে দিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী।
সম্প্রতি কলকাতায় এসে রাজ্য বিজেপি-র প্রতি সভাপতি অমিতের নির্দেশ ছিল, সারদার দুর্নীতির মামলায় সরাসরি তৃণমূল নেত্রীর ‘সততার প্রতীক’ ভাবমূর্তিকে আক্রমণ করে শাসক দলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করতে হবে। বৌবাজারে অমিতের সভার দিনই বোফর্স-কাণ্ডের স্মৃতি উস্কে দিয়ে বিজেপি কর্মীদের প্রথম বার ‘মমতা ব্যানার্জি চোর’ স্লোগান দিতে শোনা গিয়েছিল। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত সিপিএমের গণসংগঠনগুলির মিছিলে এ দিন তার পাশাপাশিই আওয়াজ তোলা হয়েছে, ‘চোর ধরেছে সিবিআই, জেলে যাবে দিদিভাই’! মিছিল শেষের জমায়েতে শ্যামলবাবু ইমরান-কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতায় মদত দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। সিটুর রাজ্য সভাপতির কথায়, “টাকা তুলে লোককে সর্বস্বান্ত করেছেন তো বটেই। দেশটাকে বিপদে ফেলারও চক্রান্ত হয়েছে! ইমরানকে সংসদে পাঠিয়ে দিলেন? বিদেশি শক্তির সঙ্গে যার যোগাযোগ! তৃণমূল নেত্রীকেও তা হলে দেশদ্রোহী ছাড়া আর কিছু বলা যায়? আপনারাই বলুন!”
শ্যামল, সুজন চক্রবর্তীদের এই প্রতিবাদ মিছিলকে অবশ্য ফের কটাক্ষই করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি এ দিন বলেন, “মানুষ যাঁদের বাতিল করেছেন, সেই দু’-চার জনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে এসে বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তিনি বিশ্বাস করেন না। তাই বিরোধী দলের নেতারা কেউ কেউ করে কম্মে খাচ্ছেন!” সারদা-কাণ্ডে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা এবং প্রয়োজনে গ্রেফতারের দাবি করেছিলেন সূর্যবাবু। আলিপুরদুয়ারে এ দিনও বিরোধী দলনেতা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, “আপনার সরকার থাকাকালীনই আপনাকে জেলে যেতে হবে!” যার জবাবে পার্থবাবু ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সূর্যবাবুর আমলে স্বাস্থ্য দফতরের বেআইনি কাজ নিয়ে তাঁরাও প্রয়োজনে সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করাতে পারেন। যদিও যে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করার অভিযোগ আনছেন পার্থবাবুরা, সেই সংস্থাকেই আবার হাতিয়ার করতে চাইছেন কেন পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা! পাশাপাশিই পার্থবাবু জানিয়েছেন, কুৎসা-অপপ্রচারের প্রতিবাদে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তৃণমূলও রাস্তায় নামবে।
মৌলালি যুব কেন্দ্রে এ দিনই এসএফআইয়ের এক সভায় দুর্নীতির প্রশ্নে তৃণমূল সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব বলেন, “এখন তো সারদায় জেলে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে কারও কারও! কিন্তু পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের চার জন মন্ত্রীকেও কি বার করতে পারবেন, যাঁর ছ’টা বাড়ি আছে? দু’কোটি টাকা আছে? থাকলে তা নিয়ে নিন। কিন্তু তিন বছর সরকার চালিয়েও এমন এক জনকে বার করতে পারলেন না!”
মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে এ দিনই অধীর চৌধুরীর খাস তালুক বহরমপুরের সভা থেকে তোপ অব্যাহত রেখেছে কংগ্রেসও। প্রদেশ সভাপতি অধীর সেখানে বলেছেন, “স্বচ্ছ সরকারের কথা বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষকে শ্যামা-মদন-রজত-ইমরান উপহার দিয়েছেন! দেশের টাকা বিদেশের জামাতকে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ইমরানের বিরুদ্ধে।” ওই সভাতেই একগুচ্ছ অর্থলগ্নি সংস্থার নাম করে আর এক বর্ষীয়ান নেতা সোমেন মিত্রের কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী চিটারদের নেত্রী!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy