Advertisement
১৭ মে ২০২৪

দেবরাজের ‘ঘরে ফেরা’ আটকাতে সক্রিয় কংগ্রেস

জিতেও স্বস্তি নেই দেবরাজ চক্রবর্তীর! এ বার তাঁকে নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের। একদা তৃণমূলের ঘরের ছেলে দেবরাজ কংগ্রেসে যোগ দিয়ে বিধাননগর-রাজারহাট পুরনিগমের ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। ভোটের পরেই খুনের মামলায় জড়িয়ে তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল।

মা (বাঁ দিকে) ও কাকিমার সঙ্গে নিউটাউনের বাড়িতে দেবরাজ চক্রবর্তী। বুধবার শশাঙ্ক মণ্ডলের তোলা ছবি।

মা (বাঁ দিকে) ও কাকিমার সঙ্গে নিউটাউনের বাড়িতে দেবরাজ চক্রবর্তী। বুধবার শশাঙ্ক মণ্ডলের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৩
Share: Save:

জিতেও স্বস্তি নেই দেবরাজ চক্রবর্তীর! এ বার তাঁকে নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের।

একদা তৃণমূলের ঘরের ছেলে দেবরাজ কংগ্রেসে যোগ দিয়ে বিধাননগর-রাজারহাট পুরনিগমের ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। ভোটের পরেই খুনের মামলায় জড়িয়ে তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। মঙ্গলবারই তিনি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। তার পরেই রাজারহাট-বিধাননগর এলাকায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তাঁকে ঘরে ফেরানোর জন্যে সক্রিয় হয়েছে তৃণমূলের একাংশ। আর তাঁর ঘরে ফেরা আটকে দেওয়ার জন্যে তৎপর হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।

ভোটের দিন পুলিশ তাঁকে আটক করেছিল। ঘন্টা খানেক থানায় আটক রাখার পর দেবরাজকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরের দিন সরাসরি খুনের চেষ্টার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই সময়ে কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক দেবরাজ অভিযোগ তুলেছিলেন,তাঁকে গ্রেফতার করার জন্যে পুলিশকে চাপ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর অভিযোগের তির ছিল কৃষিমন্ত্রী ও রাজ্যসভার তৃণমূলের সদস্য দোলা সেনের দিকেই। তাঁদের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে তিনি সব বিষয় জানিয়ে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাড়া পাওয়ার পর তিনি শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করছেন না। তার সঙ্গে তাঁর জামিনের আইনি প্রক্রিয়ায় পর উঠছে নানা প্রশ্ন। নির্দিষ্ট দিনের এক দিন আগেই দেবরাজকে আদালতে হাজির করা হল। সরকারি আইনজীবী নীরব থাকলেন। খুনের চেষ্টার জামিন অযোগ্য ধারায় রুজু হওয়া মামলায় সরকারি আইনজীবী কোনও বিরোধিতাও করেননি। ফলে তাঁর সঙ্গে শাসক দলের নেতৃত্বের কোনও গোপন সমঝোতা হয়েছে বলে এলাকায় জল্পনা রয়েছে।

জেল থেকে বাড়ি ফিরে দেবরাজ বাবা-মা সঙ্গে জমিয়ে কথা বলে উঠতে পারেননি। বাড়ির একতলার অফিসেই কার্যত আটক। ঘর ভর্তি লোকজনের ভিড়। ঘন ঘন মোবাইল বাজছে। তার মধ্যেই তাঁকে নিয়ে এই চর্চা হচ্ছে। তবে এ সবে কোনও গুরুত্ব দেননি দেবরাজ। এই বিষয়ে বুধবার তাঁর ঘরে বসে কথা তুলতেই তিনি বলেন,‘‘এ সব চায়ের দোকানের আলোচনা। এলাকার কিছু মানুষের নিজেদের মনগড়া ধারণা। ওটা রটছে।’’ সেইসঙ্গে জানিয়ে দিলেন, উন্নয়নে প্রশ্নে তিনি এলাকার সাংসদ সৌগত রায় বিধায়ক তথা কৃষি মন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবুর কাছেও যাবেন।

তৃণমূল নেতৃত্বও প্রকাশ্যে এই গুঞ্জনকে পাত্তা দেননি। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে বিধাননগরের ভাবী মেয়র সব্যসাচী দত্তের বক্তব্য, সবে ফল বেরিয়েছে। এখনও বোর্ড গঠন হয়নি। তাঁদের ভাবনায় এমন কিছু নেই। এক ধাপ এগিয়ে পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেবরাজ তো তৃণমূলেই ছিল। কিন্তু আমরা তো অল্প আসনের ব্যবধানে জিতিনি। বড় ব্যবধানে জিতেছি। ফলে দেবরাজকে ভাঙিয়ে আনার তো কোনও প্রয়োজন নেই।’’ তবে তৃণমূলের নেতাদের একাংশের কথায়, ‘‘দেবরাজ যদি ফিরতে চায়, তাঁকে সাদরে দলে ফেরানো হবে।’’

তৃণমূলের একাংশের বক্তব্যে সতর্ক হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজ্যে রাজনীতি প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে দেবরাজের আলাদা গুরুত্ব তৈরি হয়েছে। এক অসম লড়াইয়ে জয়ী দেবরাজ তাঁদের দল ছাড়বেন না বলেই মনে করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী থেকে শুরু করে দলের বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। বরং দেবরাজের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে অধীর এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূলে যাঁদের সততা, নৈতিকতা আছে, ওই দলের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসে যাঁদের দমবন্ধ হয়ে আসছে, তাঁরা কংগ্রেস এলে দেবরাজের মতোই তাঁদের একই ভাবে আমরা সম্মান জানাব।’’ দলের নেতা-কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে দেবরাজকে ‘সংবর্ধনা’ দেওয়ার কথাও এ দিন ঘোষণা করেন উত্তর ২৪পরগনার জেলা কংগ্রেস সভাপতি তাপস মজুমদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Debraj Chakraborty Trinamoo BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE