ভোট-পুজো শেষ। করিমপুরে কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।
মেঘ-মেঘ আকাশ। অনীহা ভরা ভাঙা বাজার। ঝাঁপ ফেলা দোকানের সামনে থেকে সকালের পাঁউরুটি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন আটপৌরে বাঙালি। ভোরের ট্রেন ধরতে গলির মুখে এসে দেখা মিলছে না রিকশার।
সকাল থেকে, চার লাইনের ছোট্ট শঙ্কাটা, পছন্দ আর ভাগ বাঁটোয়ারার আনুকূল্যে ফেসবুক ছেয়ে ফেলেছে।
দুয়ার আঁটা ধূসর রঙা খিল
রাস্তা জুড়ে জষ্টি-ভেজা জল
গলির মোড়ে স্তব্ধ উচ্ছ্বাস
কানে কানে (বলছে)—
কী জানি কী হয়, বল...
স্কুল-কলেজে ছুটি পড়ে গিয়েছে। পা ঘষে ঘষে অফিস কাছারিতেও হাজিরা তেমন ঘন নয়। ফল প্রকাশের পরে, এমন উচ্ছ্বাসহীন নিরীহ ছবি কে কবে শেষ দেখেছেন? মনে পড়ছে না।
কৃষ্ণনগরের টোটো চালক থেকে বহমপুরের বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী, ঠোঁট কামড়ে বলছেন, ‘‘আসলে কী জানেন তো, কখন কী হয় বলা যায় না তো!’’ কেন?
দু’শো উপচানো আসন পেয়ে শাসক দল হই হই করে নবান্নে ফেরার পরে, দলনেত্রী তো সটান সতর্ক করেছিলেন— ‘‘কোনও গণ্ডগোল যেন না হয়।’’ বৃহস্পতিবার, বেলাবেলি ফল স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে, বড় মাপের কোনও তাণ্ডও শোনেননি কেউ। দু’একটা টুকরো ধমক-ধামক আর চোখ রাঙানো ছাড়া চড়াম চড়াম ঢাকের বাদ্যিও তো তেমন কানে আসছে না। তাহলে?
শান্তিপুরের কোনও এক বসাক বাড়ির ডাকসাইটে তাঁত ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘এত থমথমে মানেই বুঝি ঝড় উঠবে!’’ সুরটা ধরে নিচ্ছেন বহরমপুরের নাট্যকর্মী, ‘‘এক্কেবারে স্থির চিত্রের মতো চুপ করে আছে শহরটা, এটা কীসের ইঙ্গিত কে জানে!’’
তবে কি, দলনেত্রীর সেই অমোঘ নির্দেশে ‘যাও ঢাক ঘরে ফেরো’, কানেই তুলছেন না তাঁর দলীয় কর্মীরা, আর সেই আশঙ্কায় থমথম করছে গ্রাম-শহর?
নদিয়ার কল্যাণী-হরিণঘাটা তেতে ছিল ভোটের আগে থেকেই। ফল বেরোতেই মোড়ে মোড়ে মোতায়েন হয়েছিল পুলিশ।
তবুও তো ফল প্রকাশের সন্ধ্যাভর ফেটেছে বোমা। সিপিএম নেতার বাড়ি থেকে চোখ রাঙিয়ে তুলে নিয়ে য়াওয়া হয়েছে স্যালো পাম্প কিংবা কংগ্রেসের পুরনো পার্টি অফিস দখল করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে দলনেত্রীর ছবি। রয়েছে, পুরুলিয়ার এক জোট প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হওয়ার অপরাধে বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া আর পারুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ীদের দোকান জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও। যা শুনে তৃণমূলের এক তাবড় নেতা মুচকি হাসছেন, ‘‘চুপ করে থাকলেও ভয়!’’
সারা সন্ধে বসে থেকেও লাইব্রেরিতে কেউ আসেননি। কৃষ্ণনগরের প্রবীণ মানুষটা নিঝুম লাইব্রেরির দদুয়ার এঁটে বলছেন, ‘‘সত্যিই তো, একটু না হয় ঠাণ্ডা মেরে আছে, তা নিয়ে এত শঙ্কার কী আছে!’’ মনে মনে তিনিও নিশ্চয় বলছেন, ‘যাও ঢাক ঘরে ফেরো!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy