Advertisement
২২ মে ২০২৪

মেয়েকে পোলিয়ো নয়! প্রশ্নের মুখে ডাক্তার বাবা-মা

জীবনের জন্য দু’ফোঁটা। আর সেই দু’ফোঁটাই নিজের মেয়েকে খাওয়াতে বেঁকে বসলেন এক চিকিৎসক দম্পতি। 

কিংশুক গুপ্ত ও  সৌমেশ্বর মণ্ডল
দাঁতন শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ০৩:৫৩
Share: Save:

জীবনের জন্য দু’ফোঁটা। আর সেই দু’ফোঁটাই নিজের মেয়েকে খাওয়াতে বেঁকে বসলেন এক চিকিৎসক দম্পতি।

গত রবিবার ছিল পালস পোলিয়োর নির্দিষ্ট দিন। যে সব শিশু ওই দিন কর্মসূচি থেকে বাদ পড়েছিল, তাদের খোঁজে সোমবার থেকে বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন-২ ব্লকের সাবড়া গ্রামের এক বাড়িতে গিয়ে আয়াৎ আরিফা বাসরাত নামে ওই শিশুকন্যার খোঁজ মেলে। বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। আয়াৎকে পোলিয়ো ড্রপ খাওয়াতে গেলে আপত্তি করেন দাদু-দিদিমা। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাবা-মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চান। তখনই জানা যায়, ওই শিশুর বাবা-মা দু’জনেই সরকারি চিকিৎসক। বাবা বাসারাত মহম্মদ ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত, আর মা আরিফা সুলতানা রয়েছেন লালগড়েরই বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতালে।

ততক্ষণে সাবড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক নিলয়কুমার দাস। কিন্তু তিনিও দাদু-দিদিমাকে রাজি করাতে পারেননি। নিলয় বলেন, ‘‘শিশুটির দাদু-দিদিমা পালস পোলিয়ো খাওয়াতে রাজি হননি। আর চিকিৎসক বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। তাই আজ, বুধবার স্বাস্থ্যকর্মীরা ফের ওই বাড়িতে যাবেন।’’

চিকিৎসক দম্পতি অবশ্য মেয়েকে সরকারি পালস পোলিয়ো খাওয়াতে রাজি নন। কেন? শিশুটির মা আরিফা সুলতানা এ দিন ফোনে বলেন, ‘‘মেয়েকে আইপিভি (ইনজেক্টবল পোলিয়ো ভ্যাকসিন) দেওয়া আছে। তাই পালস পোলিয়ো খাওয়াইনি।’’

অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মতো এই কর্মসূচি সর্বজনীন। নির্দেশিকা অনুযায়ী, পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত সব শিশুকে পালস পোলিয়ো খাওয়াতে হবে। সেখানে চিকিৎসক দম্পতির এমন মনোভাব নিয়ে শোরগোল পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসক হিসেবে তাঁদের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়েও। চিকিৎসকেদের একাংশই বলছেন, এতে জনমানসে এমন একটা ধারণা তৈরি হতে পারে যে পালস পোলিও না খাওয়ালেও চলে। আর সেটা পালস পোলিয়োর সার্থকতার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক।

চিকিৎসকেরা এ-ও বলছেন, সরকারি পালস পোলিয়ো না খেলে বড় বিপদ হয়তো হবে না। কিন্তু আইপিভি নেওয়া থাকলেও দেশজুড়ে চলা কর্মসূচি অনুযায়ী পোলিয়ো ড্রপ শিশুদের খাওয়ানো উচিত। মেদিনীপুর মেডিক্যালের শিশুবিভাগের বিভাগীয় প্রধান অরুণ দে-র মতে, ‘‘ইঞ্জেকশন ও ওরাল দু’টির প্রতিরোধ ক্ষমতা আলাদা। তাই সরকারি পালস পোলিয়ো খাওয়ানো দরকার।’’

ঘটনা জেনে পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। গিরীশবাবু বলেন, ‘‘আমি মেয়েটির মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। ওকে ভালভাবে বুঝিয়েছি।’’ চিকিৎসক দম্পতি কি সত্যি বুঝলেন, প্রশ্ন ঘুরছে জেলার স্বাস্থ্য মহলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Polio Vaccine Health Medical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE