Advertisement
১৮ মে ২০২৪
durga pujo

Durga Puja: একই সঙ্গে চিকিৎসক ও দুর্গাপুজোর তন্ত্রধারক, ডাক্তার মৌমিতা এ বার কোভিড-ডিউটির চাপে

মৌমিতাদের বাড়িতে পুজোর নিয়মও অনেকটা আলাদা। মহালয়ার আগেই হয় দেবীর বোধন। মা দুর্গার পুজো শুরু হয় কৃষ্ণা নবমী তিথিতে।

তন্ত্রধারকের আসনে ডাক্তার মৌমিতা।

তন্ত্রধারকের আসনে ডাক্তার মৌমিতা।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২১ ১০:১৯
Share: Save:

চিকিৎসক মৌমিতা দাস। বজবজের এলবি দত্ত হাসপাতালের স্কুল হেলথ বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার। এটা মৌমিতার একটা পরিচয়। আর একটা পরিচয়, তিনি দুর্গাপুজোর তন্ত্রধারক। তবে বারোয়ারি নয়, বাড়ির পুজোয় সেই ২০০৮ সাল থেকে তন্ত্রধারকের ভূমিকা নিয়ে আসছেন। তবে গত বছরের মতো এ বছরেও নিয়ম মেনে আসনে বসতে পারবেন না। কারণ, পুজোর সময় কোভিড ডিউটি রয়েছে।
এন্টালির আনন্দ পালিত বাস স্টপের কাছেই শীল লেন। সেখানে দাস বাড়ির পুজো সবাই চেনে। এটা মৌমিতার বাপের বাড়ি। বিয়ে হয়ে গেলেও তিনি দাস বাড়ির পুজোয় তন্ত্রধারকের ভূমিকা পালন করেন। আর পুরোহিত হন তাঁরই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ভাই প্রসেনজিৎ। কম্পিউটর সংক্রান্ত ব্যবসা করলেও পুজোর ক’দিন পুরোপুরি পুরোহিত প্রসেনজিৎ।

পুজো অবশ্য ক’দিনের নয় এই বাড়িতে। মহালয়ার আগেই হয় বোধন। কেন? জবাবে মৌমিতা বললেন, ‘‘শারদীয় দুর্গাপুজোতেই বোধন হয়। বাসন্তি পুজোর সময় যে দুর্গাপুজো, তাতে বোধন নেই। আর পুজোর মন্ত্রেই উল্লেখ রয়েছে যে, আদ্রা নক্ষত্র যুক্ত তিথিতেই দেবীর বোধন হয়। কিন্তু ষষ্ঠী তিথি আদ্রা নক্ষত্র যুক্ত হয় না। কৃষ্ণা নবমীতে আদ্রা নক্ষত্র পাওয়া যায় বলেই আমাদের বাড়িতে সেই তিথি থেকে শুক্লা নবমী পর্যন্ত পুজো। তার পরে দশমী ও বিসর্জন।’’ পিতৃপক্ষে দুর্গাপুজো শুরুর আরও এক কারণ হিসেবে মৌমিতা বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর সপ্তকল্প। প্রথম কল্প শুরু হয় কৃষ্ণা নবমীতে। সেটা মেনেই পুজো হয় আমাদের বাড়িতে।’’

মৌমিতা ও প্রসেনজিতের পুজো শুরুর কাহিনিও বেশ লম্বা। ভাইবোনের সঙ্গে কথায় জানা যায়, প্রসেনজিৎ বারাণসীতে গিয়ে স্মৃতি শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। মোহনানন্দ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে গিয়ে বেদ পাঠও শেখেন। মৌমিতা কলকাতাতেই সংস্কৃতের পাঠ নেন পণ্ডিত জয়ন্ত কুশারির কাছে। প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘ভবানীপুরে মামাবাড়িতে দুর্গাপুজো হত। ছোটবেলায় সেখানেই পুজো কাটত। তখন থেকেই নিজেদের বাড়িতে পুজো করার ইচ্ছা তৈরি হয়। পরে আবার ইচ্ছা হয় নিজেরাই নিজেদের পুজো করব।’’

পুজো তাঁদের রক্তেই বলে দাবি মৌমিতার। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাপের বাড়ি বৈষ্ণব। আমাদের রক্তেই তাই পুজো রয়েছে। বারণসীতে মোহনানন্দ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে আমরা পুজো দেখেছি। ব্রহ্মচারী মহারাজ নিজে ভাইকে দিয়ে পুজো করিয়েছিলেন। এর পরে ভাই নিজেদের বাড়িতে পুজো করতে চায়। ২০০৮ সালে শুরু হয় পুজো। ভাই পুরোহিত, আমি তন্ত্রধারক।’’ তবে তার আগে এক বছর দুর্গাপুজোর প্রশিক্ষণ নেন ওঁরা। ১৫ বছর ধরে চলে আসা পুজো সম্পর্কে মৌমিতা বলেন, ‘‘সেই থেকে এ ভাবেই চলে আসছে। তবে গত বছর থেকে আমি আর আসনে বসতে পারছি না। কারণ, কোভিড ডিউটি থাকায় যে কোনও সময়ে হাসপাতালে যেতে হতে পারে। এ বারও তাই। পুজো আর হাসপাতাল দুই-ই সামলাচ্ছি। তবে আসনে বসছি না। পুজোর জন্য তো আর হাসপাতালে যে কাজের দায়িত্ব রয়েছে সেটা অস্বীকার করতে পারি না।’’ মৌমিতার আশা, আগামী বছর আবার বসবেন আসনে। তত দিনে শেষ হয়ে যাবে করোনা-মোকাবিলা।

পুজো এখানে ১৫ দিনের।

পুজো এখানে ১৫ দিনের।

মহিলা হয়ে পুজোর তন্ত্রধারকের ভূমিকা পালন করলেও সেটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে রাজি নন মৌমিতা। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, নিজের বাড়ির পুজো বলেই তিনি করেন। ‘ব্রহ্মা জানেন’ সিনেমার মহিলা পুরোহিতের কথা উঠতেই যেন একটু রেগে গেলেন। বললেন, ‘‘ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ছেলেখেলা আমি ঠিক মনে করি না। নিজের বিশ্বাস নিজের কাছে। কিন্তু অপরের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা জানানোটাও দরকার। বারোয়ারি পুজোয় মহিলা পুরোহিত নিয়োগ করে প্রচারের আলোয় থাকা যায় কিন্তু সেটাকে নারীর ক্ষমতায়ণ বলে আখ্যা দেওয়া ঠিক নয়।’’

দুর্গাপুজো যে তাঁদের কাছে শুধুই উৎসব নয়, তা বোঝাতে মৌমিতা বলেন, ‘‘দুর্গাপুজো শুরু করার আগে শূলপাণি, বিদ্যাপতি, জীমূতবাহনের বই সংগ্রহ করি আমরা। সেগুলি আমরা অধ্যয়ন করেছি। বাংলায় রঘুনন্দনের পুজো পদ্ধতি মানা হয়। আমরাও সেই মতেই পুজো করি। আবার তিনটি পুরাণ মতে হয় দুর্গাপুজো। দেবীপুরাণ, কালীকাপুরাণ এবং বৃহৎনন্দীকেশ্বর পুরাণ। আমরা বৃহৎনন্দীকেশ্বর পুরাণ মেনেই পুজো করি।’’ ডাক্তার দিদির কথার সূত্র ধরেই ইঞ্জিনিয়ার ভাই প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘এই সময়ে আমরা মূর্তি এনে পুজো করি। কিন্তু মা দুর্গা আমাদের বাড়িতে নিত্য পুজো পান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

durga pujo Covid doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE