Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

ক্লাবে অনুদানের টাকা পকেটে ঢোকে তৃণমূল নেতার

সারদা কর্তার কাছ থেকে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় ২৭টি ক্লাবের জন্য প্রায় কোটি টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে সিবিআইয়ের তদন্তে আগেই উঠে এসেছে। কিন্তু ওই টাকারও একটা বড় অংশ নয়ছয় হয়েছে বলে এ বার জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। শাসক দলের প্রভাবশালী কয়েক জন নেতার পকেটে ওই টাকার বেশ কিছুটা ঢুকেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১২
Share: Save:

সারদা কর্তার কাছ থেকে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় ২৭টি ক্লাবের জন্য প্রায় কোটি টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে সিবিআইয়ের তদন্তে আগেই উঠে এসেছে। কিন্তু ওই টাকারও একটা বড় অংশ নয়ছয় হয়েছে বলে এ বার জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। শাসক দলের প্রভাবশালী কয়েক জন নেতার পকেটে ওই টাকার বেশ কিছুটা ঢুকেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।

সিবিআই সূত্রের খবর, সুদীপ্ত সেনের বয়ান অনুযায়ী, মোট ৯৮ লক্ষ টাকা ২৭টি ক্লাবকে দেওয়ার জন্য কুণাল ঘোষের হাতে দেওয়া হয়েছিল। কিছু দিন আগে সুদীপ্ত ও কুণালকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন ক্লাবগুলিকে টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলে তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদও সুদীপ্তর কথায় সায় দেন। জেরায় কুণাল জানান, দলের এক শীর্ষনেতার নির্দেশে সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার-ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতার কাছে টাকা পৌঁছে দিয়েছিলেন। ওই নেতাই ২৭টি ক্লাবের তালিকা তৈরি করেছিলেন এবং ওই নেতাই ক্লাবগুলিকে টাকা বিলি করেছিলেন বলে কুণাল তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। তদন্তকারীদের দাবি, ওই নেতাই সেই টাকার একটা বড় অংশ নিজের পকেটে পুরেছেন।

কুণালকে জেরা করে ২৭টি ক্লাবের মধ্যে কয়েকটির নামও সিবিআই জেনেছে। সেই ক্লাবগুলি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, পদ্মপুকুর রোড, চেতলা রোড, কুণ্ডুপাড়া লেন, ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ রোড, নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিট, রূপচাঁদ মুখার্জি লেন, শাঁখারিপাড়া রোডে অবস্থিত। সুদীপ্ত সিবিআইকে জানিয়েছেন, কুণালের দেওয়া এই ক্লাবগুলির নামের তালিকার প্রতিলিপি সারদার মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে রাখা ছিল।

সুদীপ্তর হিসেব মতো তিন দফায় তিনি মোট ৯৮ লক্ষ টাকা কুণালকে দিয়েছিলেন। ২৭টি ক্লাবের মধ্যে ২টি ক্লাবকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। দু’টি ক্লাবকে দেওয়া হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা করে। বাকি ২৩টি ক্লাবের মধ্যেও টাকা সমান ভাগে দেওয়া হয়নি বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, পদ্মপুকুর ও কালীঘাট থানা সংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি ক্লাবকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। কালীঘাট থানা সংলগ্ন একটি ক্লাবের সদস্য নিজেও এ দিন কবুল করেন, “২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মাসে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের একটি চায়ের দোকানে আমাদের ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। পুজোর পাশাপাশি উপনির্বাচনের দিকে লক্ষ রাখার জন্য বলা হয়েছিল।”

সিবিআইয়ের এক তদন্তকারীর কথায়, ২০১১ ও ২০১২ সালের মধ্যে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় প্রায় সব ক’টি ক্লাবেরই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু তারই মধ্যে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কুণ্ডুপাড়া লেন, পদ্মপুকুর রোড ও চেতলা রোডের কয়েকটি ক্লাব তাদের কার্যালয়কে প্রায় রাজপ্রাসাদ বানিয়ে ফেলেছে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, ওই সব ক্লাবগুলির মাথায় রয়েছেন তৃণমূলের নেতারা।

বৃহস্পতিবার ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির লাগোয়া একটি ক্লাব বছর দেড়েকের মধ্যে চারতলা হয়ে গিয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, প্রায় ১০ বছর ধরে ওই ক্লাবটি ২৫০ থেকে ৩০০ বর্গফুটের একটি ঘরে চলত। কিন্তু ২০১১ সালের নভেম্বর মাসের পর থেকে ক্লাবটির রমরমা শুরু হয়। এখন এই ক্লাবটির এক-একটি তলা প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের। প্রত্যেকটি ঘরই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতা ওই ক্লাবের মাথা। সিবিআইয়ের অভিযোগ, ওই নেতাই কুণাল ঘোষের কাছ থেকে সারদার টাকা নিয়ে ভবানীপুর এলাকায় ২৭টি ক্লাবকে বিলি করার দায়িত্বে ছিলেন।

একই ছবি কুণ্ডুপাড়া লেনের একটি ক্লাবেও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকায় আগে একটি ফাঁকা মাঠ ছিল। বছর দেড়েকের মধ্যে তা দোতলা ক্লাব হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ওই ক্লাবটির প্রধান।

পদ্মপুকুর রোডের ক্লাবটিতে কিছু দিন আগেও ছোট এক-চিলতে ঘরের সামনে সাইনবোর্ড ঝুলত। ওই এলাকার এক সিপিএম ঘেঁষা প্রোমোটার ক্লাবটির মাথা ছিলেন। এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, ২০১১ উপনির্বাচনের পর থেকে ওই প্রোমোটারকে তৃণমূলের মিছিল-মিটিংয়ে দেখা যাচ্ছে। তাঁর ক্লাবটিও বছর দুয়েকের মধ্যে দোতলা হয়ে গিয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE