রাজ্যের ৯২টি পুরসভায় বেলা তিনটে পর্যন্তই ভোট হবে। তৃণমূলের দাবি ছিল, ভোট নেওয়া হোক বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য নিবার্চন কমিশন। রবিবার মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে চিঠি দিয়ে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাওয়ার পরে ভোট নেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো আইনত সম্ভব নয়। বিরোধী দলগুলি এতে খুশি হলেও ক্ষোভ জানিয়েছে তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কমিশনের সিদ্ধান্ত জানার পরে বলেছেন, ‘‘পুরভোটের আইন নিয়ে সিপিএম যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে সেটাই মেনে চলছেন নির্বাচন কমিশনার।’’
রাজ্য প্রশাসনের একটি অংশ অবশ্য নির্বাচন কমিশনারের এই ভূমিকায় খুশি। তাঁদের যুক্তি, মীরা পাণ্ডে অবসর নেওয়ার পরে সুশান্তবাবুকে যখন কমিশনার করা হয়, অনেকেই ভুরু কুঁচকেছিলেন তখন। ভেবেছিলেন, ডব্লিউবিসিএস অফিসার সুশান্তবাবু সরকারের মন জুগিয়ে চলবেন। তাঁর নিজের বক্তব্যও ছিল, সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতেই তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। এবং ঘটনা হল, বিভিন্ন পুরসভার মেয়াদ শেষে সরকার নির্বাচন করতে রাজি হচ্ছে না দেখেও সংঘাতের পথে যেতে চাননি সুশান্তবাবু। এ বার তিনিই ভোটের সময়সীমা নিয়ে শাসক দলের মতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় শুরু হয়েছে জল্পনা।
সুশান্তবাবুর পূর্বসূরি মীরা পাণ্ডের সঙ্গে তৃণমূল সরকারের সংঘাত একটা সময় চরম আকার নিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাজনীতির জগতের ও প্রশাসনের কেউ কেউ বলছেন, তবে কি নিজেদের আমলে নিযুক্ত নতুন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গেও সংঘাত বাধতে চলেছে রাজ্য সরকারের! অনেকে আবার মনে করছেন, তা না-ও হতে পারে। রাজ্য সরকারের বশংবদ হয়ে কাজ করছে না, এটা প্রমাণ করার একটা দায় রয়েছে কমিশনের। পার্থবাবুও ভোটের সময়ের প্রশ্নে সিপিএমের কথা মানার কথা বলে হয়তো বোঝাতে চাইছেন, কমিশন তৃণমূল বা রাজ্য সরকারের কথায় চলছে না। এতে ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন বা অন্য প্রশ্নে কমিশনের বিরুদ্ধে শাসক দলের তাবেদারির অভিযোগ উঠলে, তার মোকাবিলা করতে সুবিধে হবে।
আগামী ১৮ ও ২৫ এপ্রিল দু’দফায় ভোট হবে ওই ৯২টি পুরসভায়। ভোট নেওয়া হবে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারির পরে তৃণমূল গত বৃহস্পতিবার কমিশনকে চিঠি দিয়ে ৫টা পর্যন্ত ভোট নেওয়ার দাবি জানায়। গত শনিবার কমিশন সর্বদল বৈঠক ডাকে এ নিয়ে। সেখানে তৃণমূলের দাবির বিরোধিতা করে বাকি সব দল। আইনি বাধ্যবাধকতার কথা জানান নির্বাচন কমিশনারও। এ বার চিঠি লিখে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন সুশান্তবাবু। তিনি জানিয়েছেন, ভোটের দিন ও সময় নির্ধারণের অধিকার রাজ্য সরকারের। তারা তা করার পরেই ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। কিন্তু পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গেলে দ্বিতীয় বার বিজ্ঞপ্তি জারি করা যায় না। আইনে এর কোনও বিধান নেই। চিঠিতে তিনি ১৯৯৪ সালের পশ্চিমবঙ্গ পুর-নির্বাচনী আইনের ৮ নম্বর ধারার উল্লেখ করেছেন।
কমিশনের এই ভূমিকায় বিরোধী দলগুলি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। যদিও পার্থবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘লোকসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির পরেও ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানোর নজির রয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেন সেই পথে হাঁটবে না।’’ কমিশনের সঙ্গে বিরোধী দলগুলিকেও এক হাত নিয়েছেন পাথর্বাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যারা ভোটে সকলের অংশগ্রহণ চায়, তারাই আবার সময় বাড়ানোর বিরোধিতা করছে।’’ ভোটের সময় নিয়ে সুশান্তবাবুর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের আইনে বলা আছে ভোটগ্রহণের সময় নূন্যতম ৮ ঘণ্টা হতে হবে। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত আট ঘণ্টাই হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy