উদ্বেগে শ্রমিকদের পরিবার। নিজস্ব চিত্র
তানজানিয়ায় কাজ করতে গিয়ে যে আট জন শ্রমিক জেলবন্দি হয়েছেন, তাঁরা কবে কী করে মুক্তি পাবেন সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে তাঁদের পরিবারের।
এই রাজ্য থেকে অন্য দেশে কাজ করতে নিয়ে যাওয়ার নামে প্রতারণা ও অনিয়মের অভিযোগে এই ঘটনা নবতম সংযোজন। নদিয়ার হাঁসখালির আট বাসিন্দা আপাতত আফ্রিকার ওই দেশের কারাগারে বন্দি। ভিসার নথিপত্রে গন্ডগোল থাকাতেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয় যে এজেন্ট তাঁদের নিয়ে গিয়েছিলেন সেই শ্রীমন্ত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে হাঁসখালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আটক শ্রমিকদের বাড়ির লোকজন।
শুক্রবার রাতে শ্রীমন্তকে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করেছে হাঁসখালি থানার পুলিশ। আজ, রবিবার তাঁকে কৃষ্ণনগর আদালতে তোলার কথা। পুলিশ সূত্রের খবর, এই চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে দিল্লি থেকে নাদিম সালাফি নামে আরও এক জনকে ধরা হয়েছে। তবে তাঁকে হাঁসখালি থানায় আনা হবে কি না, শনিবার রাত পর্যন্ত তা স্পষ্ট হয়নি।
আরও পড়ুন: মারা গেলেন দগ্ধ সেই পুলিশকর্মী
জেলবন্দি শ্রমিকেরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাঁসখালি থানার পশ্চিম হরিণডাঙা গ্রামের জনা কয়েক বাসিন্দা সম্প্রতি বিদেশে কাজের জন্য এজেন্ট শ্রীমন্ত বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শ্রীমন্ত তাঁদের তানজানিয়ায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁদের পরিবারের অভিযোগ, এর জন্য প্রত্যেকের থেকে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। গত ১৯ অক্টোবর হাঁসখালি থানার আট জন স্থানীয় এজেন্টের কথা মতো তানজানিয়ার যাওয়ার জন্য বাড়ি ছাড়েন। প্রথমে মুম্বই গিয়ে সেখান থেকে ২৬ অক্টোবর তাঁদের বিমান ধরার কথা ছিল। দুবাই হয়ে তাঁরা তানজানিয়ায় পৌঁছবেন বলে এজেন্ট জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: বহরমপুরে প্রহৃত তৃণমূলের নেতা
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মুম্বইয়ে থাকাকালীন ওই আট জনের সঙ্গে কথা হলেও তার পরে আর কোনও যোগাযোগ করা যায়নি। দিন কয়েক আগে তানজানিয়া থেকে এক জন হাঁসখালিতে এক পরিচিতের কাছে ‘ভয়েস মেসেজ’ পাঠিয়ে জানান, তাঁরা বিপদের মধ্যে আছেন। নথিপত্রে গোলমাল থাকায় তাঁরা কাজ পাননি, বরং গ্রেফতার করে জেলে চালান করা হয়েছে।
এর পরেই পরিবারের লোকজন এজেন্টের বিরুদ্ধে হাঁসখালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁদের অভিযোগ, কাজ দেওয়ার নাম করে নিয়ে যাওয়া হলেও এজেন্ট ঠিক মতো নথিপত্র তৈরি করে দেননি। প্রতারিত হয়েছেন ওই শ্রমিকেরা। তদন্তে নেমে পুলিশ শ্রীমন্তকে গ্রেফতার করে। কিন্তু বিদেশে বন্দি শ্রমিকেরা কবে ফিরবেন, তা এখনও অজানা।
ওই শ্রমিকদের এক জন, বিদ্যুৎ বিশ্বাসের স্ত্রী নীপা বিশ্বাস জানান, তাঁর স্বামী এর আগে আফ্রিকার কঙ্গোয় কাজ করতে গিয়েছিলেন। প্রায় দু’বছর সেখানে কাজ করে ছ’মাস আগে বাড়ি ফেরেন। আবার কাজের সন্ধান পাওয়ায় তানজানিয়া রওনা দিয়েছিলেন। নীপা বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে দু’দিন আগে ওঁর কথা হয়েছে। তখনই জানান, ওখানে ঠিক মতো খাবার পাচ্ছে না, কষ্টে আছে। বারবার উদ্ধার করার আবেদন করছিল। আমরা খুবই চিন্তায় আছি।’’ তিনি জানান, পরিজনদের ফেরাতে তাঁরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। এ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy