নিমাই ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
শ্বশুরবাড়ির যন্ত্রণা সইতে না-পেরে গায়ে আগুন দিয়েছিলেন ২৮ বছরের মেয়ে। চিতার আগুনে মেয়ের সব জ্বালার অবসান দেখলেন তিনি।
মেয়ের শোকে বিষপান করেছিলেন মা। রবিবার রাতে ব্যারাকপুর শ্মশানে মেয়ের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেই জীবনসঙ্গিনীকে ছাই হয়ে যেতে দেখলেন তিনি।
তিনি মধ্যমগ্রামের নিমাই ঘোষ।
কী ভাবে মৃত্যু হল মা-মেয়ের?
নিমাইবাবুর বড় মেয়ে প্রিয়াঙ্কার বিয়ে হয়েছিল জগদ্দলের বাসিন্দা, সীমান্তরক্ষী নরেশ পানের সঙ্গে। দু’টি ছেলেমেয়ে আছে তাঁদের। পুলিশের কাছে অভিযোগপত্রে নিমাইবাবু জানান, শাশুড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না-পেরে দিন চারেক আগে গায়ে আগুন দেন প্রিয়াঙ্কা। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন নরেশ। দু’জনকেই কলকাতায় কম্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
নাওয়া-খাওয়া ভুলে স্বামীর সঙ্গে হাসপাতালে ছুটছিলেন প্রিয়াঙ্কার মা শিখাদেবী। ‘‘দু’দিন ধরেই শিখা বলছিল, প্রিয়াঙ্কার কিছু হয়ে গেলে আমি আর বাঁচব না। শনিবার সকালে যখন মেয়ের মৃত্যুর খবর এল, শিখা পুজো করছিল। ‘কী হবে পুজো করে, ঠাকুর উল্টে রেখে দাও’— বলেই বেরিয়ে আসি। শিখা বুঝে গিয়েছিল, কী হয়েছে। মেয়ের সঙ্গেই আমাকে ছেড়ে চলে গেল ও,’’ রবিবার সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন নিমাইবাবু।
আরও পড়ুন: থানা-ডাকঘর দৌড়ে টাকা উদ্ধার বৃদ্ধার
মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েই নিমাইবাবু বেরিয়ে যান। দত্তপুকুর স্টেশনে গিয়ে শোনেন, ময়না-তদন্তের পরে মেয়ের দেহ ফিরে পেতে তাঁর ছবি লাগবে। বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন, দরজায় তালা। পড়শিরা জানান, শিখাদেবী কীটনাশক খেয়েছেন। বারাসত হাসপাতালের পথে তিনি মারা যান।
নিমাইবাবু ছোটেন বারাসত হাসপাতালে। সেখান থেকে কম্যান্ড হাসপাতাল। শনিবার রাতে জগদ্দল থানায় প্রিয়াঙ্কার শাশুড়ি আরতি পানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, মা-মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে জগদ্দলের কুতুবপুরে নরেশের বাড়িতে চড়াও হন পড়শিরা। পুলিশ আরতিকে গ্রেফতার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তোলা হয় ব্যারাকপুর আদালতে।
‘‘বিয়ের গয়না শাশুড়ির পছন্দ না-হওয়ায় তা ভেঙে গড়িয়ে দিতে হয়েছে। আমি চাষি। তবু মেয়ের কথা ভেবে সব করেছি। কিন্তু ওকে বাঁচাতে পারলাম না,’’ বললেন নিমাইবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy