ব্যস্ত: রোগী দেখছেন স্বপনকুমার বিশ্বাস। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
ভিন্ দেশের ডাক্তারি ডিগ্রি তাঁর। তবে সে ডিগ্রি বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করে অর্জন করতে হয়নি। জেনিভার একটি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ নাকি কলকতায় এসে তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেই ডিগ্রি দিয়ে গিয়েছেন।
শুধু এই একটি ডিগ্রিতে শেষ হলেও কথা ছিল। তাঁর আবার ডাক্তারির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। বিদেশের মেডিক্যাল কলেজ থেকেই। এমন যাঁর ডিগ্রির বহর, সেই তিনিই শিক্ষানবিশ ছিলেন সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে। এখন তিনি বিধানচন্দ্র রায় মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক বলে পরিচয় দেন।
তিনি স্বপনকুমার বিশ্বাস। তাঁর প্রেসক্রিপশনে তেমনই লেখা। ঘোলারবোর্ডঘরে বড় রাস্তার পাশে সাজানো চেম্বার। এলাকায় শিশু চিকিৎসক হিসেবেই পরিচিত তিনি। কোনও বৈধ রেজিস্ট্রেশন নম্বর না থাকলেও রোগী দেখছেন। শিশুদের টিকাও দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে পৌঁছনো গেল সেই ডাক্তারবাবুর চেম্বারে। রোগী পরিচয়ে। বাইরে রোগীদের বসার জায়গা। সেখানে খাওয়ার জল থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় টুকিটাকি রাখা। ডাক্তারবাবুর ফি যে ১৫০ টাকা, তা-ও বড় বড় করে লেখা রয়েছে।
ডাক্তারবাবুর তখন রোগী দেখা প্রায় শেষ। বেরোনোর তোড়জোড় চলছে। চেম্বারে ঢুকে জানালাম, রোগী নেই। না দেখে ওষুধ দেওয়া যাবে কি? চেয়ারে বসতে বলে স্বপনবাবু বললেন, ‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ, কেন দেওয়া যাবে না। পেশেন্টের বয়স কত?’’
—চার বছর।
—কী অসুখ?
—দাঁতে যন্ত্রণা, সঙ্গে জ্বর।
একটা কাগজ টেনে খসখস করে ডাক্তারবাবু ওষুধ লিখে দিলেন। বলে দিলেন, ‘‘দিনে দু’বার খাওয়াবেন। জ্বর, দাঁতে যন্ত্রণা সেরে যাবে।’’
লিখছেন প্রেসক্রিপশনও, যার মাথায় লেখা রয়েছে তাঁর যোগ্যতা। ঘোলায়।
বোর্ডঘর ছাড়া কি আর কোথাও চেম্বার করেন তিনি? স্বপনবাবু জানালেন, বারাসতে চেম্বার রয়েছে তাঁর। তাঁর বাড়ি নিউ ব্যারাকপুরে। তবে বাড়িতে চেম্বার করেন না তিনি। কিন্তু কেন? তিনি বললেন, ‘‘আসলে হাসপাতালে ডিউটি থাকে তো আমার। তাই আর সময় পাই না।’’
কোন হাসপাতাল? স্বপনবাবু জানালেন, ফুলবাগানের বিধানচন্দ্র রায় মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতাল। সেখানে কখন তাঁকে পাওয়া যাবে? তিনি বললেন, ‘‘আউটডোরে অপশনাল ডিউটি থাকে। ফলে সব সময়ে পাবেন না। আমাকে ইন্ডোরে, ইমার্জেন্সিতে ডিউটি করতে হয়।’’ শিশু হাসপাতালে খোঁজ করলে তাঁকে পাওয়া যাবে তো? স্বপনবাবুর জবাব, ‘‘এস কে বিশ্বাস বললে যে কেউ দেখিয়ে দেবে।’’
টেবিলের উল্টো দিকে বসা ব্যক্তির সাংবাদিক পরিচয় জানার পরে অবশ্য বেশ কিছু ক্ষণ আর কোনও কথা বললেন না ‘ডাক্তারবাবু’। ক্ষণিকের স্তব্ধতা ভেঙে জানতে চাওয়া গেল, এমন ভিন্ দেশি ডিগ্রি কী করে পেলেন তিনি? চিকিৎসকের উত্তর, বিদেশে যেতে হয়নি এর জন্য। কলকাতায় এসে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁকে জেনিভা থেকে ডিগ্রি দিয়ে গিয়েছে। কোন মেডিক্যাল কলেজ? উত্তর নেই। এমডি ডিগ্রির পরে বন্ধনীর মধ্যে লেখা ওইউএ। এর মানে কী? তিনি জানালেন, ওপেন ইউভার্সিটি অব অলটারনেটিভ মেডিসিন। কিন্তু তাঁর এমবিবিএস ডিগ্রি কোথা থেকে পাওয়া? এল না উত্তর।
হরেক প্রশ্নের মুখে পড়ে অবশেষে স্বপনবাবু জানালেন, তিনি বিজ্ঞানের স্নাতক। এমবিবিএস নন। তবে এ ভাবে চিকিৎসার মতো ‘প্রাণঘাতী’ কাজ কেন করছেন তিনি? এ তো এক অর্থে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণাও বটে, সে দিকে কি খেয়াল রাখেন না তিনি? শিশুদের টিকাকরণই বা কেন করছেন? ‘‘আসলে ঠিক প্রতারণা নয়। আমি ভালই রোগী দেখি বুঝলেন। তবে হাসপাতালে চাকরি করি না। আমি ওখানে ইন্টার্নশিপ করেছিলাম।’’
বিধানচন্দ্র মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের অধ্যক্ষ মালা ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘ওই নামে আমাদের এখানে কোনও ডাক্তার নেই। তা ছাড়া এখানে ইন্টার্নশিপও করানো হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy