রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ফ ব-র কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ আলম সৈরানি। ছবি: সংগৃহীত।
বিদ্রোহের আবহ আরও ঘনীভূত হল বাম শরিক দল ফরওয়ার্ড ব্লকে। এ বার দলের নেতৃত্ব এবং সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ফ ব-র কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ আলম সৈরানি। ফ ব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে দলের রাজনৈতিক অবস্থান এবং দল পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে ভূরি ভূরি প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। দেবব্রতবাবু জানিয়েছেন, দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ওই পদত্যাগপত্র নিয়ে আলোচনা হবে। প্রথমে তরুণ প্রাক্তন বিধায়ক আলি ইমরান রামজ্দের (ভিক্টর) বিদ্রোহ ও তার জেরে দল থেকে বহিষ্কার এবং এখন সৈরানির ইস্তফায় জোর ধাক্কা খেল ফ ব। পারিবারিক সম্পর্কে সৈরানি ভিক্টরের কাকা। গোয়ালপোখরের বিধায়ক, ভিক্টরের বাবা রমজ়ান আলির হত্যাকাণ্ডের পরে সৈরানিই ওই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে জেতেন ভিক্টর।
ফ ব-র প্রথম সারির নেতা সৈরানি প্রয়াত অশোক ঘোষের আমল থেকেই বামফ্রন্টের বৈঠক ও কর্মসূচিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুরও স্নেহভাজন তিনি। বাম রাজনীতিতে আরও বেশি যুক্ত হওয়ার জন্য অশোকবাবুর পরামর্শে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে যে দলের সর্বক্ষণের কর্মী হয়েছিলেন, তার এখনকার হাল নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সৈরানি। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও স্বৈরাচারী তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে তোলার সুযোগ ছিল, দিশাহীন নেতৃত্বের জন্য তা কাজে লাগানো যায়নি। সাম্প্রতিক কালে রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পরেও ফ ব রাজ্য নেতৃত্বের জোরালো কোনও বক্তব্য নেই। বরং, অশোকবাবুর শতবর্ষ বা অন্য অনুষ্ঠান উপলক্ষে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে দলের যোগাযোগের কথা সামনে এনে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি করা হচ্ছে বলে প্রাক্তন মন্ত্রীর অভিযোগ। রাজ্য নেতৃত্বের দল পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়ার জেরে কিছু দিন আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে ভিক্টর, যুব নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়দের। ‘আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে’ ভিক্টরদের বহিষ্কার প্রসঙ্গেও পদত্যাগের চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন সৈরানি।
পরে সৈরানির বক্তব্য, ‘‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দল চলছে না। দলে আমি মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ছিলাম। সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছি।’’ ভিক্টরদের সঙ্গেই এ বার ‘আজ়াদ হিন্দ মঞ্চে’ তাঁকে দেখা যাবে কি না, সেই প্রশ্নে অবশ্য সৈরানি বলেছেন, পরবর্তী কোনও পদক্ষেপ তিনি ঠিক করেননি। ফ ব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রতবাবু শুক্রবার বলেছেন, ‘‘পদত্যাগপত্র পেয়েছি। আগামী ১৫ ও ১৬ অক্টোবর হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এই চিঠি পেশ করা হবে। তার পরে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেওয়া হবে।’’ রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হয়েও বেশ কিছু সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি জানতে পারেননি বলে অভিযোগ সৈরানির, তাঁর প্রশ্ন আছে দলের আয়-ব্যয়ের হিসেব নিয়েও। ফ ব-র রাজ্য নেতৃত্ব সূত্রে অবশ্য পাল্টা বলা হচ্ছে, দলের তহবিলের হিসেব ও চেকে অন্যতম স্বাক্ষরকারী ছিলেন সৈরানিই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy