Advertisement
২১ মে ২০২৪
Trafficking

Trafficking: আশঙ্কা বিক্রির ছক, হোমে ঠাঁই শিশুর

শিশুটির মাসি পুলিশকে জানিয়েছেন, দিন কয়েক হল শিশুটির মায়ের নির্দেশে তার দাদুই বাচ্চাটিকে জোর করে ডায়মন্ড হারবারের বাড়িতে নিয়ে যায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৩৮
Share: Save:

মোটে বছর তিনেক বয়স তার। তবু কাঁপা হাতের রেখায় এখনই হাসিখুশি একটি ছোট্ট মেয়ের ছবি আঁকে সেই মেয়ে। কখনও বা ফুটিয়ে তোলে ছোট্ট বাড়ির ছবি। কলকাতার হেস্টিংস উড়ালপুলের নীচের ঝুপড়ির বাসিন্দা এমনই এক একরত্তি মেয়েকে ভিন্ রাজ্যে বিক্রির আশঙ্কায় একটি হোমে রাখার নির্দেশ দিয়েছে সমাজকল্যাণ দফতরের সংশ্লিষ্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি)।

অতিমারির দু’টি বছরে আর্থিক সঙ্কট তথা রুটিরুজির আকালে শিশুদের অবস্থা বিপন্ন হয়েছে বলে নানা রিপোর্টেই উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে শিশুকন্যাটির বিষয়ে জানতে পেরে দ্রুত পদক্ষেপ করে সিডব্লিউসি। তাদের দাবি, শিশুটিকে অজমেঢ় শরিফে পাঠানোর জন্য বুধবারের ট্রেনের টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছিল। ডায়মন্ড হারবারের বনরহাট থেকে সোমবার সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় থানার পুলিশ। পুলিশের দাবি, ছোট্ট মেয়েটির মা (তিনি রাজস্থানে থাকেন) এবং পরিবারের কয়েক জন আত্মীয়ই বিক্রির ‘চক্রান্তে’ জড়িত থাকতে পারে। শিশুটির মাসির অভিযোগের ভিত্তিতেই সিডব্লিউসি এবং পুলিশ নড়েচড়ে বসে।

তবে যাঁরা না-থাকলে একরত্তি মেয়েটিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা যেত না, তাঁরা হলেন দুই তরুণ, তরুণী অঙ্কিতা সেনগুপ্ত এবং বিনন্দন সরকার। তাঁরা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করেন। হেস্টিংসের ওই ঝুপড়ি তল্লাটে স্থানীয় বাচ্চাদের পড়াশোনার সূত্রে তাঁদের যাতায়াত। শিশুকন্যাটি সেখানেই তার মাসির সঙ্গে থাকত। মাসি জঞ্জালকুড়ানি।

শিশুটির মাসি পুলিশকে জানিয়েছেন, দিন কয়েক হল শিশুটির মায়ের নির্দেশে তার দাদুই বাচ্চাটিকে জোর করে ডায়মন্ড হারবারের বাড়িতে নিয়ে যায়। তিনি জানতে পারেন, বাচ্চাটিকে অজমের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও পাকা। ওই মহিলার দাবি, তিনি আগে ওর মাকে ওইটুকু বাচ্চার উপরে অত্যাচার করতে দেখেছেন। বাচ্চাটিকে মায়ের কাছ থেকে এনে মাসি বড় করছিলেন। শিশুটির পরিজনের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, ওর মা হঠাৎই দাদুর বাড়িতে টিকিট পাঠিয়ে বাচ্চাটিকে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে, যা অনেকের কাছেই সন্দেহজনক ঠেকে। শিশুটির দাদু পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরই ট্রেনে করে শিশুটিকে রাজস্থানে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

অঙ্কিতা, বিনন্দনেরা দৌড়ঝাঁপ শুরুর পরেই তাঁদের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টা প্রথমে শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের এবং পরে সিডব্লিউসি-র কানে তোলা হয়। সিডব্লিউসি-র কলকাতা ও বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনারও চেয়ারপার্সন মহুয়া শূর রায় বলেন, “শিশুটির কিছু একটা বিপদের আশঙ্কা রয়েছে বুঝেই আমরা হস্তক্ষেপ করি। ডায়মন্ড হারবার থানাকে নির্দেশ দিই বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে যেন একটি হোমে রাখা হয়।” এর পরেই
অঙ্কিতা-বিনন্দনেরা শিশুটির মাসিকে সঙ্গে নিয়ে ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশের কাছে যান। শিশুটিকে উদ্ধারের সময়ে প্রথমটা রাজি হননি তার দাদু। কিন্তু অঙ্কিতা ও নিজের মাসিকে দেখে এক গাল হেসে তাঁদের কোলে যেতে বাচ্চাটি মরিয়া হয়ে ওঠে, জানিয়েছেন মহুয়া।

সিডব্লিউসি-র মাধ্যমে শিশুটিকে ইএম বাইপাসের ধারের একটি হোমে রাখা হয়েছে। মহুয়া বলছেন, “শিশুটির পাচার বা বিক্রির মতলবে পরিবারের কারও কোনও
কুমতলব ছিল কি না, তা তদন্তেই বোঝা যাবে। তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশকে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” আপাতত হোমেই ছবি এঁকে নিজের স্বপ্নের বাড়ির ছবিতে মশগুল ঘরহারা একরত্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Trafficking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE