Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

চমক দেখাল ‘ভর’ মুক্ত মেয়ে

দু’বছর আগের কথা। মেয়ের আমিষে রুচি নেই, গায়ে আঁশের মতো দাগ দেখে প্রবীণদের কয়েক জন দাবি করেছিলেন, মেয়ের শরীরে ‘দেবী’ এসেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০৬:০০
Share: Save:

দেবী থেকে মানবী হয়ে হাঁফ ছেড়েছেন জলপাইগুড়ির অনন্যা দাস। আশি শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে এখন অনন্যা চান অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধেই লড়াই করতে। তার জন্য চান আইনজীবী হতে।

দু’বছর আগের কথা। মেয়ের আমিষে রুচি নেই, গায়ে আঁশের মতো দাগ দেখে প্রবীণদের কয়েক জন দাবি করেছিলেন, মেয়ের শরীরে ‘দেবী’ এসেছে। দেবী বলতে মনসা। মনসার ‘ভর’ও উঠেছে জানিয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অনন্যাকে পুজোও করা হয়েছিল। মাতব্বরেরা নিদান দেন, ‘স্কুলে গিয়ে আর কাজ নেই!’ ক্লাসে প্রথম হত যে মেয়ে, মাসখানেকের বেশি সময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার স্কুলে যাওয়া।

সোমবার জলপাইগুড়ির ধাপগঞ্জের বাড়িতে তারই বাবা বিধান দাস বলছিলেন, “ভাগ্যিস লোকের কথা শুনে পড়াশোনা বন্ধ করিনি। লোকের কথা শুনে এখনই মেয়ের বিয়ের কথাও ভাবছি না, মেয়ে যা পড়তে চায়, তাই পড়াব।” তাঁর কথায়, ‘‘যা নম্বর পেয়েছে, এখন আর কেউ বলবে না মেয়ের ভর হচ্ছে।’’

শ্যামলা রঙের মেয়েটি চোখে চশমা দিলে গম্ভীর দেখায়। সোমবার সকালে স্কুলের পোশাক পরে উঠোনে বসেছিলেন। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এই উঠোনেই প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছিল। দু’সপ্তাহ ধরে তাঁকে শুধু দুধ-কলা খাওয়ানো হয়েছে। সকলে বলাবলি করতেন মেয়ের মনসার ‘ভর’ হয়। অনন্যার মা বর্ণা দাস এরপর স্বপ্নাদেশও পান বলে দাবি। মেয়েকে পুজো করতে হবে। পড়াশোনা বন্ধ করে মেয়েকে পুজোর বেদিতে বসানো হয়। এ দিন অনন্যা বলেন, “যা হওয়ার হয়েছে। আমি আর পড়াশোনা বন্ধ করব না। স্কুলের দিদিমণিরা আমাকে খুব সাহায্য করেছেন।”

ছাত্রীর ফিরে আসার পিছনে দিদিমণিদের লড়াইও রয়েছে। জলপাইগুড়ি বিবেকানন্দ হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণির শিক্ষিকা সুমনা ঘোষ দস্তিদারের কথায়, “হঠাৎ একদিন শুনি ক্লাসে প্রথম হওয়া ছাত্রী নাকি মনসা হয়ে গিয়েছে। মাসখানেক ধরে স্কুলে আসাও বন্ধ হয়েছিল। তার পরেই ওর বাড়ি যাই।” দিদিমণিদের তখন ‘ভক্ত’দের কয়েক জন তাড়াও করেন। তবে তাতে হাল ছাড়েননি কেউ। প্রতি সপ্তাহে ছাত্রীর বাড়ি গিয়েছেন, শিলিগুড়িতে চিকিৎসা করানো হয়েছে। অন্তত মাস দুয়েক পরে ছাত্রীকে স্কুলে ফেরাতে পেরেছিলেন দিদিমণিরা। প্রধান শিক্ষিকা আলো সরকারের কথায়, “ওর ভাল রেজাল্ট কিন্তু আমাদেরও পরীক্ষার ফল।”

বর্ণাদেবী জড়িয়ে ধরেন শিক্ষিকাকে। বাবা বলছেন, “সত্যিই ও অনন্যা।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE