বলছি তো, আছি...। ছবি: শান্তনু হালদার।
অন্য কাউকে এই পদে মেনেই নেব না, গোঁ ধরে বসেছিল পড়ুয়ারা। চেয়েছিল, প্রধান শিক্ষক যেন তাদের স্কুল ছেড়ে না যান।
কাগজের উপরে কাঁচা হাতে লেখা পোস্টার লিখে এনেছিল পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার এই দাবিতে গোটা ক্লাস রুম নেমে এসেছিল স্কুল চত্বরে। হাবরার জানাফুল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত হালদারকে ঘিরে ধরে চলে আবদার, বিক্ষোভ, অনুরোধ। অনেকে প্রধান শিক্ষকের পা জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। চোখ দিয়ে তখন জল গড়াচ্ছিল কিছু ছাত্রীর। কয়েকশো পড়ুয়া স্লোগান তোলে, ‘‘যেতে হলে আপনাকে আমাদের বুকের উপর দিয়ে যেতে হবে।’’
শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রধান শিক্ষককে ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগ ও ভালবাসার কাছে নতি স্বীকার করেন। কথা দেন, স্কুল ছেড়ে কোথাও যাবেন না। প্রাথমিক ভাবে ওই কথাতেও কাজ হয়নি। পরে প্রধান শিক্ষক প্রতিটি ক্লাসে গিয়ে আলাদা আলাদা করে ছাত্র-ছাত্রীদের জানিয়ে আসেন, তিনি স্কুল ছেড়ে যাচ্ছেন না। এরপরে অবশ্য পড়ুয়াদের মধ্যে আর কোনও সংশয় ছিল না। বেলা ১টার পরে ফের শুরু হয় পঠন-পাঠন।
কেন প্রধান শিক্ষককে ঘিরে এমন আবেগ?
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগে এই স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন জয়ন্তবাবু। ৫১ বছর বয়সী ইংরেজির শিক্ষক জয়ন্তবাবুর ব্যবহারে মুগ্ধ ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীরা। জয়ন্তবাবুর সুচারু নেতৃত্বে স্কুলের পঠন-পাঠনের মানেরও উন্নতি হতে থাকে। পরিকাঠামো বৃদ্ধি পায়। ২০১৬ সালে এই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ৮৪ জন। সকলেই পাশ করেছে। উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষা দিয়েছিল ১১২ জন। পাশ করেছে ৯০ জন। পড়ুয়া অনিমেষ মণ্ডল, অনামিকা সরকার, সুস্মিতা কুণ্ডুরা জানায়, প্রধান শিক্ষক অভিভাবকের মতো ব্যবহার করেন। কোনও সমস্যা হলেই তাঁর কাছে ছুটে যায় ছেলেমেয়েরা।
তা হলে কেন স্কুল ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক?
জয়ন্তবাবু জানালেন, ছোটবেলায় লেখাপড়া করেছিলেন হাসনাবাদ থানার অন্তর্গত রামেশ্বরপুর ইউনিয়ন আদর্শ বিদ্যালয়ে। ওই স্কুল তৈরির ক্ষেত্রে তাঁর বাবা প্রয়াত কালীদাসবাবুর অনেক অবদান রয়েছে। অধুনা বারাসতের বাসিন্দা হলেও ওইখানেই জয়ন্তবাবুর আদিবাড়ি। সব মিলিয়ে ওই স্কুলের প্রতি একটা আবেগ, দুর্বলতা রয়েছে তাঁর। ওই স্কুলে কিছু দিন আগে প্রধান শিক্ষকের পদ ফাঁকা হয়। সেখানকার বাসিন্দারা জয়ন্তবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকেই ওই পদে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি রাজিও হয়ে যান। এসএসসি ও ওই স্কুল থেকেও প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেওয়ার অনুমোদন পেয়ে যান। এ দিকে জানাফুল হাইস্কুলের পড়ুয়ারা মঙ্গলবার জানতে পারেন, সত্যিই তাদের প্রিয় হেডস্যার চলে যাচ্ছেন। তারপরেই স্যারকে আটকাতে শুরু হয় বিক্ষোভ। বয়ে যায় আবেগের বন্যা। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘আসলে ওই স্কুলের প্রতি আমার আবেগ-ভালবাসা আছে। কারণ তাই যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখানে পড়ুয়াদের ভালবাসার কাছে আমাকে নতি স্বীকার করতে হবে বলেই মনে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy