তৌফিক আনোয়ার ও আবু বক্কর দালাল। নিজস্ব চিত্র
ভোরবেলা ফজরের নমাজে যাওয়ার পথে হাঁক পেড়ে যেতেন প্রবীন পড়শি— ‘তৌফিক উঠে পড় বাবা, ভোরের পড়াটা একেবারে মাথায় গেঁথে যায়।’ সন্ধ্যায় মাগরিবের নমাজ সেরেই পাড়ার দাদারা তাকে খেলার মাঠের ধারে কাছে দেখলে ধমকে দিতেন, ‘‘কি রে এখনও বাইরে কেন, যা পড়তে বস।’’ আস্ত গ্রামটাই যেন তার ভরসায় বুক বেঁধে ছিল।
তৌফিক কথা রেখেছে। পমাইপুর মাদ্রাসা থেকে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম হওয়ার পরে গ্রামের মসজিদ থেকে শুক্রবার দিনভর ঘোষণা করা হল, ‘‘সুসংবাদ....আমাদের গর্ব তৌফিক আনোয়ার এ বছর...।’’ মসজিদের ইমাম মহম্মদ সেলিম রেজা বলছেন, ‘‘নিজের চোখে দেখেছি তো, ঘোর অভাবের মধ্যেও কী নিরলস পরিশ্রমের পাশাপাশি পড়াশোনাটা চালিয়ে গেছে ছেলেটা।’’ মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক ব্লক ইসলামপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের এক প্রত্যন্ত গ্রাম পমাইপুর। তৌফিকের ঠিকানা। পমাইপুর হাই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু তাহের বলেন, ‘‘পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষায় এখনও ওর নম্বর কেউ টপকাতে পারেনি। আমরা ওকে নিয়ে আশা করেছিলাম, তবে রাজ্যে প্রথম হবে ভাবিনি।’’ কেবল লেখাপড়াতেই নয়, ফুটবল মাঠেও তৌফিক বেশ পরিচিত। নিজেই বলছে, ‘‘মেরে কেটে ঘণ্টা সাতেক পড়েছি। বাকিটা ফুটবল আর ফুটবল।’’
তৌফিকের মতো, মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম-এ সম্ভাব্য প্রথম দশে সর্বোচ্চ পেয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মড়ার গ্রামের আবু বক্কর দালাল। হুগলির ফুরফুরা ফাতেহিয়া সিনিয়র টাইটেল মাদ্রাসার এই পড়ুয়া ৯০০ নম্বরের মধ্যে ৮৪০ পেয়েছে। টানাটানির সংসার, বাবা লোকমান দালাল সামান্য জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালান। টিনের ছাউনির কাঁচাবাড়ি তার ঠিকানা। আবুর ইচ্ছে, ‘‘বড় হয়ে অধ্যাপক হতে চাই আর বাবা-মাকে একটু যত্নে রাখতে চাই। ইচ্ছে আছে, আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়ার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy