Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
library

ভাসিয়েছিল বন্যা, ৪৪ বছর পর পুনর্জন্ম গ্রন্থাগারের

পাঁচের দশকের গোড়ায় প্রয়াত তারাপদ সাঁতরা গ্রামবাসীদের সাহায্য নিয়ে মাটির বাড়িতে শুরু করছিলেন এই গ্রন্থাগার। পেশায় চাষি তারাপদর নিজের পড়াশোনা বেশি না হলেও শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন তিনি।

Library.

বাগনানের খানপুরে নব নির্মিত গ্রন্থাগার ভবনে গ্রামবাসীরা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাগনান শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১৮
Share: Save:

মৃত্যুর পর ছাই ফুঁড়ে যেমন বেরোয় ফিনিক্স পাখি, এও তেমনই এক পুনর্জন্মের গল্প। ৪৪ বছর আগে বন্যায় শেষ হয়ে যাওয়া এক গ্রন্থাগার ফের দরজা খুলল। এক সপ্তাহ আগে বাগনানের খানপুর গ্রামে নতুন করে পথচলা শুরু করল ‘খানপুর তারাপদ সাঁতরা আলোক মন্দির পাঠাগার’।

পাঁচের দশকের গোড়ায় প্রয়াত তারাপদ সাঁতরা গ্রামবাসীদের সাহায্য নিয়ে মাটির বাড়িতে শুরু করছিলেন এই গ্রন্থাগার। পেশায় চাষি তারাপদর নিজের পড়াশোনা বেশি না হলেও শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন তিনি। পাশাপাশি এলাকার সকলে যাতে পড়াশোনা করতে পারে, সেই কারণেই খুলেছিলেন গ্রন্থাগারটি। কিন্তু ১৯৭৮ সালের বন্যায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেটি। ইতিমধ্যে সাংসারিক দায়িত্ব বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে এই গ্রন্থাগারের কাজ আর এগোতে পারেননি তিনি। পরিজনরা জানান, ১৯৯০ সালে মৃত্যুর সময়েও গ্রন্থাগার করতে না পারা নিয়ে আক্ষেপ ছিল তাঁর।

বাবার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে এগিয়ে আসেন তারাপদর মেজো ছেলে অনুপ। বর্তমানে রামরাজাতলার বাসিন্দা অনুপ ২০২১ সালে রেলের চাকরি থেকে অবসর নেন। অবসরকালীন ভাতা থেকে ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে নতুন করে গ্রন্থাগারটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বিষয়টি জানান পরিজন ও গ্রামের বাসিন্দাদের। সকলের সহযোগিতাতেই গড়ে ওঠে পাকা ভবন। গত ২২ এপ্রিল নবরূপে পথচলা শুরু করে তারাপদবাবুর নামাঙ্কিত গ্রন্থাগারটি।

অনুপ বলেন, ‘‘গ্রন্থাগারটি নষ্ট হওয়ার দুঃখ সারা জীবন বয়ে বেরিয়েছেন বাবা। অবসরের সময় পরে হাতে টাকা পাওয়ার পরই বাবার অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলাম। তবে পরিজন ও গ্রামবাসীদের পাশে না পেলে এই প্রচেষ্টা সফল হত না।’’

গ্রন্থাগারের সভাপতি করা হয়েছে তারাপদবাবুর বড় ছেলে নিখিলকে। সম্পাদক হয়েছেন গ্রামের বাসিন্দা স্বপনকুমার ভৌমিক, সহ-সম্পাদক নারায়ণ প্রামাণিক। অনুপকেও সহ-সভাপতি করে পরিচালন সমিতিতে আনা হয়। অনুপের অর্থানুকূল্য আর সমিতির তত্ত্বাবধানে বছরভর চলবে গ্রন্থাগার ভবনের কাজ।

এই এলাকায় এখনও কোনও সরকারি গ্রন্থাগার নেই। তাই এই গ্রন্থাগার নিয়ে এলাকাবাসীর আগ্রহ নজরে পড়ার মতো। গ্রামের বাসিন্দারাই বই দিয়ে সাজিয়েছেন গ্রন্থাগার। নতুন কী বই লাগবে, তার তালিকা করে কলকাতা থেকে বই আনা চলছে। নিখিল বলেন, ‘‘গ্রামের অনেকে বইয়ের অভাবে পড়া শেষ করতে পারে না। তাদের সহায় হবে এই গ্রন্থাগার।’’ স্বপন বলেন, ‘‘প্রতিদিন অন্তত দু’ঘন্টা করে গ্রন্থাগার খোলা হবে। পরে সময়সীমা বাড়ানো হবে। এখানে আঁকা, গান, নাচও শেখানো হবে।’’ নারায়ণের সংযোজন, ‘‘আমরা চাই গ্রন্থাগারটি গ্রামে পড়াশোনা-সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র হোক।’’

গ্রন্থাগার ভবনের উদ্বোধনের সময়ে হাজির ছিলেন তারাপদর স্ত্রী অঞ্জলিদেবী। ছেলের হাত ধরে স্বামীর তৈরি প্রতিষ্ঠান যে ভাবে প্রাণ ফিরে পেল, তা দেখে তাঁর চোখে আনন্দাশ্রু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

library Bagnan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE