আনিস খানের খুড়তুতো ভাই সলমন খানের উপর হামলা নিয়ে শুরু রাজনৈতিক তরজা। — ফাইল চিত্র।
আনিস খানের ভাই সলমন খানের উপর হামলা নিয়ে তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় তুলছে তাঁর পরিবার। তাঁদের দাবি, আনিস-কাণ্ডের সাক্ষী সলমন। তাই সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করতেই শাসক দলের তরফে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ আনিসের বাবা এবং সলমনের স্ত্রীর। যদিও, এই তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। জোড়াফুল শিবিরের দাবি, পারিবারিক বিবাদের জেরে ঘটে থাকতে পারে এই ঘটনা। সলমনের ঘটনা নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
সলমনের পরিবারের দাবি, শুক্রবার রাতে এক দল দুষ্কৃতী বাড়িতে ঢুকে তাঁর উপর হামলা চালিয়েছে। তাঁকে দিয়ে টাঙি দিয়ে কোপানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে তৃণমূলের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন আনিসের বাবা সেলিম খান। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আনিসের মামলাটা শেষ করে দেওয়ার জন্য সলমনকে শেষ করার চেষ্টা করেছিল শাসকদলের লোকজন। শাসকদলের স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী এর সঙ্গে জড়িত আছে। তারাই ঘটিয়েছে এই কাণ্ড। কারণ সলমন আনিসের ঘটনার সাক্ষী। সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য সলমনের উপর হামলা হয়েছে।’’
একই সুর সলমনের স্ত্রী হোসেনারা খাতুনের গলাতেও। তাঁর দাবি, ‘‘আনিসের পক্ষে দাঁড়িয়ে স্বামী প্রতিবাদ করেছিল। তাই ওকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। আনিসের মৃত্যুর পর আমাদের বাড়িতে হামলা হয়েছিল। হুমকি দেওয়া হত, আনিসকে ছাদ থেকে ফেলে মেরে দিয়েছি, এ বার যাকে মারব তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। শাসকদলের লোকজন রাস্তাঘাটে যেখানে দেখতে পেত হুমকি দিত।’’ এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে হোসেনারার অভিযোগ।
সলমনের উপর আক্রমণের অভিযোগকে সামনে রেখে তৃণমূলকে তোপ দেগেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। তাঁর কথায়, ‘‘পিসি-ভাইপো এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীদের ছাড়া এ রাজ্যে কারও কোনও নিরাপত্তা নেই। আনিস খান প্রতিবাদী বলে তাঁকে খুন করা হয়েছে। অথচ সিট বলেছে, ওঁকে খুন করেনি কেউ। উনি আত্মহত্যা করেছেন। এই মামলার সাক্ষী আনিসের ভাই। তিনি নিরাপত্তা চাইলেও দেওয়া হয়নি। এ বার হয়তো বলবে, উনি নিজেই নিজের মাথায় কোপ মেরেছেন। এ ভাবে নিষ্কণ্টক থাকা যাবে না।’’
সিপিএমের সুরে সুর মিলিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করেছেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার। পুলিশকে দিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত করানো যায় না। সিট গঠন করে পুলিশকে দোষী সাব্যস্ত করার তদন্তে নিরপেক্ষতা থাকে না। কারণ শাসকদল-পুলিশ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। এই পুলিশ মঙ্গলকোটে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি। তাই অভিযোগ থেকে তাঁর মুক্তি হয়েছে। সিবিআই তদন্ত হলে বা আদালতের নির্দেশে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য সামনে আসবে।’’
এই হামলার নেপথ্যে ভিন্ন কোনও কারণ রয়েছে বলেই মনে করছে তৃণমূল। বিধায়ক এবং হাওড়া গ্রামীণের তৃণমূল সভাপতি অরুণাভ সেনের দাবি, ‘‘এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। এখন তৃণমূলকে সব কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, জড়িয়ে দিলে খবরে আসা যায়। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে তদন্ত হচ্ছে। তৃণমূলের কর্মীরা অত বোকা নয় যে, এই সময়ে দাঁড়িয়ে আনিস খানের খুড়তুতো ভাইকে মারধর করে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে। আমি ঘটনাটি শুনেছি। খবর নিয়েছি। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। ওদের একটি পারিবারিক বিবাদ দীর্ঘ দিন ধরে আছে। সেই সংক্রান্ত ঘটনায় কিছু ঘটে থাকতে পারে।’’
আমতার এসডিপিও কৃষ্ণেন্দু ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘‘এই ঘটনার তদন্ত চলছে। এখনই কিছু বলা যাবে না। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে বিষয়টি বলা যাবে।’’ মাথা-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত নিয়ে বর্তমানে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সলমন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy