পর্ষদের কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যে শহরাঞ্চলে বাজি নিষিদ্ধের দাবি তুলল চন্দননগরের পরিবেশ অ্যাকাডেমি। রাজ্যের মুখ্যসচিব, পর্ষদ-সহ নানা দফতরে তাদের আবেদন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে বছরের নির্দিষ্ট কয়েক দিন নির্ধারিত সময়ে বাজি পোড়ানোর ছাড়পত্র দেওয়া হোক শুধু গ্রামাঞ্চলে। তাও যত্রতত্র নয়। প্রশাসনের তরফে নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করে একমাত্র সেখানেই সেই অনুমতি দেওয়া হোক।
তবে ‘প্রভাবশালী’ বাজি কারবারিদের এড়িয়ে এ কাজ আদৌ হবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। ৯০ থেকে বাড়িয়ে বাজির সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা ১২৫ ডেসিবেল করেছে পর্ষদ।
বাজি ও ডিজে বক্স বিরোধী মঞ্চের তরফে গৌতম সরকার বলেন, ‘‘পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রকে আমরা বাজির শব্দমাত্রা পুরনো জায়গায় ফেরানোর অনুরোধ করি। তিনি নিজের অক্ষমতা ও আইনি সমস্যার কথা বলেন। শব্দমাত্রা বাড়ালেই তো আইনি সমস্যা হওয়ার কথা! কমালে কেন সমস্যা হবে, আমাদের বোধগম্য নয়।’’ পর্ষদের নির্দেশিকা বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার মঞ্চের সদস্যরা সল্টলেকে পর্ষদের কার্যালয়ের সামনে লিফলেট বিলি করেন। চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দেন।
কল্যাণের দাবি, ‘‘ভুল ব্যাখা হচ্ছে। সর্বোচ্চ মাত্রা ১২৫ ডেসিবেল মানে ওই মাত্রায় বাজি ফাটবে এমনটা নয়। বায়ূর উপর একটি সমীক্ষা চলছে আমাদের রাজ্যে। এক বছর সমীক্ষার পরে সর্বোচ্চ মাত্রা ১১০ ডেসিবেলও ধার্য হতে পারে।’’
রাজস্থানের একটি মামলার রায়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, শুধু বাতাস নয়, শব্দদূষণ রোধেও প্রত্যেকটি রাজ্যে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পরিবেশ অ্যাকাডেমির সভাপতি বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বার বার সতর্ক করছে। অথচ আমাদের রাজ্যে
বাজির শব্দমাত্রা বাড়িয়ে উল্টো পথে হাঁটার বন্দোবস্ত হচ্ছে!’’ পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, মাত্রাছাড়া দূষণে দিল্লিতে বাজি নিষিদ্ধ হয়েছে। কলকাতা বা রাজ্যের বিভিন্ন শহরেও বাতাস ভাল নেই। তাই সতর্কতা জরুরি। বেহিসেবি বাজিতে বাতাস আরও বিষিয়ে যাবে। বিশ্বজিতের ক্ষোভ, ‘‘মনে হচ্ছে, পর্ষদ মানুষের ফুসফুস বন্ধক রাখছে মুনাফাখোর বাজিওয়ালাদের কাছে।’’
উত্তরপাড়ার নাট্যকর্মী তপন দাস বলেন, ‘‘পর্ষদের ভূমিকায় আমরা তাজ্জব। বায়ুদূষণ কমাতে সহায়কের ভূমিকা না-নিয়ে উলটপুরাণ ভাবা যায় না।’’ এই শহরেরই নাট্যকর্মী কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শীতের সময় বিশেষত বয়স্কদের নিঃশ্বাসে সমস্যা হয়
বাতাসে ধূলিকণা বেড়ে যাওয়ায়। ভুল সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়া যায় না! পর্ষদ শব্দমাত্রা বিবেচনা করুক।’’ কালীপুজোর আগেই শ্রীরামপুর, চন্দননগরে বাজি ফাটছে। প্রশাসনের বক্তব্য, বেআইনি বাজি বেচাকেনা ও ফাটানো বন্ধে চেষ্টা করা হবে। যদিও বেআইনি বাজি বিক্রি চলছে বলে অভিযোগ।
মঞ্চের সদস্যরা বলছেন, বাজির প্রভাব জনস্বাস্থ্যে পড়ে। শব্দ, আলোর ঝলকানিতে কুকুর, বিড়াল অস্বাভাবিক আচরণ করে। প্রচুর পাখি মারা যায়। ইডেনের সামনে ঘোড়ার মৃত্যু নিয়ে পর্ষদে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছে মঞ্চ। পরিবেশ অ্যাকাডেমির দাবি, ঘোড়াটির মৃত্যুতে সিএবি থেকে ১ কোটি টাকা দূষণমূল্য আদায় করুক পর্ষদ। শ্রীরামপুরে বুধবার মোমবাতি জ্বালিয়ে ওই ঘোড়ার মৃত্যুর প্রতিবাদ জানানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy