Advertisement
২৫ মে ২০২৪
১০০ টাকার দোরগোড়ায় ডিজ়েল, সমস্যা নানা ক্ষেত্রে
Farmers

Farming Price: বিঘাপিছু চাষের খরচ বাড়ছে, ফসলের দাম নিয়ে চিন্তা চাষির

কৃষিক্ষেত্রে ডিজ়েল এখন অপরিহার্য। জমিতে সেচ দেওয়া, কর্ষণ করা, ধান কাটা, ফসল তোলা— সব কৃষিযন্ত্রই ডিজ়েলচালিত।

ট্রাক্টরের সাহায্যে জমি চষছেন এক চাষি। গোঘাটের ভিকদাস এলাকায়।

ট্রাক্টরের সাহায্যে জমি চষছেন এক চাষি। গোঘাটের ভিকদাস এলাকায়। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৩৯
Share: Save:

সার, কীটনাশকের দামে হাত পুড়ছেই। লাফিয়ে বাড়ছে ডিজ়েলের দামও।

চাষের কাজে প্রধান তিন হাতিয়ারের দামবৃদ্ধিতে হিমশিম খাচ্ছেন রাজ্যের অন্যতম ফসল উৎপাদক জেলা হুগলির বহু চাষি। ডিজ়েলের দাম বাড়ায় চাষের খরচ বিঘাপিছু আরও এক-দু’হাজার টাকা বেড়ে গেল বলে তাঁরা জানিয়েছেন। তাতে পরবর্তী সময়ে ফসলের দাম মিলবে কি না, সেই আশঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনই অনেকে ধরে নিচ্ছেন, জমি অনাবাদী রাখতে হবে।

কৃষিক্ষেত্রে ডিজ়েল এখন অপরিহার্য। জমিতে সেচ দেওয়া, কর্ষণ করা, ধান কাটা, ফসল তোলা— সব কৃষিযন্ত্রই ডিজ়েলচালিত। খেত থেকে কৃষিপণ্য পরিবহণে গরুর গাড়ি উঠে গিয়ে এখন ট্রাক্টরই ভরসা। তারও জ্বালানি ডিজ়েল। চাষিরা যাবেন কোথায়?

তারকেশ্বরের তালপুর গ্রামের চাষি উৎপল পানের কথাই ধরা যাক। তাঁর দু’বিঘা জমি আছে। বোরো চাষ করছেন। দিনপনেরো আগেও জমিতে সেচের জন্য মোটর-ভাড়া নিয়েছেন ঘণ্টাপিছু ১২০ টাকায়। এখন সেই ভাড়া বেড়ে হয়েছে ঘণ্টাপিছু ১৫০ টাকা।উৎপলের কথায়, ‘‘এ বার শেষ হয়ে যাবে চাষিরা। এমনিতেই সার-কীটনাশকের দামের ঠেলায় হিমশিম খাচ্ছি। এখন ডিজ়েলের দর চিন্তা বাড়াচ্ছে। সব কিছুর বাজারদর বেড়েছে বলে কৃষি-শ্রমিকেরাও ২৩০ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকা মজুরি দাবি করছেন।” গোঘাটের বেলডিহা গ্রামের প্রান্তিক চাষি বাদল নন্দীর বিঘাতিনেক জমি আছে। তাঁর আশঙ্কা, “ডিজ়েলেরদাম বেড়ে যা অবস্থা, তাতে সব জমি চাষ করতে পারব কি না সংশয়ে আছি।”

বৃহস্পতিবার হুগলির পাম্পগুলিতে এক লিটার ডিজ়েল বিক্রি হয়েছে প্রায় ৯৭ টাকায়। দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে, কেউ জানেন না। চাষের খরচ বৃদ্ধি নিয়ে কৃষি দফতরও উদ্বিগ্ন।
জেলার কৃষি আধিকারিক প্রিয়লাল মৃধা বলেন, “চাষের খরচ কিছুটা বেড়ে যাবে ঠিকই। তবে সে জন্য জমি অনাবাদী থাকবে বলে মনে হয় না। এমন নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন হুগলির চাষিরা। জমি অনাবাদী থাকেনি। সেচের ক্ষেত্রে অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুদয়ন হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খুব কম চাষিকেই ডিজ়েলের দামের কোপে পড়তে হবে। তবে, জমিতে চাষ করা বা ফসল ঘরে তোলার ক্ষেত্রে ওই চাপ থাকছে।”

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলিতে মোট জমির ৮৩ শতাংশ সেচের আওতায় রয়েছে। সরকারি সেচ ব্যবস্থায় ১০০ শতাংশ বিদ্যুদয়ন হলেও ব্যক্তি-মালিকানার সাব-মার্সিবল পাম্পগুলির এখনও প্রায় ১০ শতাংশ বাকি আছে। সেগুলি ডিজ়েলেই চলে। কৃষি দফতর থেকে ওই সব পাম্প-মালিকদের সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে উদ্যোগী করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত বছর থেকে।

কৃষি দফতর সরকারি সেচ ব্যবস্থায় বিদ্যুদয়নের কথা বললেও আরামবাগের রামনগরের বিদ্যাপতি বাড়ুই বা পুরশুড়ার কেলেপাড়ার চাষি বাপ্পাদিত্য ধোলে মনে করছেন, যেখানে সেচ ব্যবস্থায় বিদ্যুদয়ন হয়েছে, সেখানে খালি ট্রাক্টরে চাষ করা এবং ফসল ঘরে তোলাতেই বিঘাপিছু এক হাজার টাকা খরচ বাড়ল। আর যে সব জমিতে পাশাপাশি খাল-বিল বা ডিজ়েলচালিত গভীর নলকূপ থেকে জল তোলা হয়, সেখানে আরও এক হাজার টাকা খরচ বেড়েছে।

এমনিতেই খরচ অনুপাতে ফসলের দাম মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে বহু চাষির। সরকারি সহায়ক মূল্যে শুধু ধান কেনা হয়। আলু বা অন্য আনাজ কেনা হয় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথাও ভাবতে হয় চাষিরেকে। কয়েক মাস আগেই তিন দফা নিম্নচাপের বৃষ্টিতে মার খেয়েছিল আলু ও আনাজ চাষ।
এখন পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই বলে অভিমত চাষিদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE