Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Gondolpara

Suicide: গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক আত্মঘাতী

জুটমিল অবিলম্বে চালুর দাবিতে শুক্রবার রেল অবরোধের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।

জিতেন্দ্র কুমার রবিদাস।

জিতেন্দ্র কুমার রবিদাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২২ ১১:০৪
Share: Save:

স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। শুক্রবার রাতে ভাড়াঘরের দরজা ভেঙে ঝুলন্ত দেহ মিলল স্বামীর। মৃত জিতেন্দ্র কুমার রবিদাস (২৯) চন্দননগরের বন্ধ গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক। আত্মীয়দের অভিযোগ, অনটনের কারণেই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন।

বছর কয়েক আগে উৎপাদন বন্ধের সময় গোন্দলপাড়া জুটমিলের একাধিক শ্রমিক আত্মঘাতী হন। মাঝে উৎপাদন চালু হলেও সুদিন ফেরেনি। মিল ফের বন্ধ। জিতেন্দ্রর পরিণতিতে মিল-কর্তৃপক্ষের দিকেই আঙুল তুলেছেন সহকর্মীরা। ওই জুটমিল অবিলম্বে চালুর দাবিতে শুক্রবার রেল অবরোধের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ সমিতির আইনি পরামর্শদাতা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘মিল-কারখানার মালিকপক্ষ শ্রমিকের কথা ভাবেন না। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সরকারও শ্রমিকের পাশে নেই। উৎপাদন চালুর নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা করেও গোন্দলপাড়া কর্তৃপক্ষ চুক্তি লঙ্ঘন করলেন।অথচ, সরকার চুপ। শ্রমিকের করুণ পরিণতি হচ্ছে।’’

শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র হুগলি জেলা সম্পাদক প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রশাসন যখন শ্রমিকের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে তৎপর, মিল খোলা এবং সুষ্ঠু ভাবে চালানোর দায়িত্ব তারা নিক। অসহায় শ্রমিকের মৃত্যুর দায়ও মিল-কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের নেওয়া উচিত।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জিতেন্দ্র প্রায় ১০ বছর আগে এই মিলে কাজে ঢোকেন। তিনি স্পিনিং বিভাগের শ্রমিক ছিলেন। স্ত্রীকে নিয়ে শ্রমিক আবাসন সংলগ্ন মালাপাড়ায় ভাড়া থাকতেন।

পরিবারের লোকেরা জানান, মিল বন্ধ থাকায় অনটনে পড়ে ওই শ্রমিকের পরিবার। বিকল্প কাজের চেষ্টা করলেও ঠিকমতো ‌না-মেলায় পরিস্থিতি শুধরোয়নি। তার জেরে পারিবারিক অশান্তি হত। পরিস্থিতি তাঁকে হতাশ করে তুলেছিল। সম্প্রতি স্ত্রীকে বিহারে বাপের বাড়িতে রেখে আসেনজিতেন্দ্র। গোন্দলপাড়া জুটমিলে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলায় জিতেন্দ্র আশা করেছিলেন, শীঘ্রই উৎপাদন শুরু হবে। তিনি কাজ পাবেন। কিন্তু, উৎপাদন চালুর বদলে গত বুধবার ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ নোটিস ঝুলিয়ে দেন মিল-কর্তৃপক্ষ। তাতে তিনি আরও হতাশ হয়ে পড়েন।

পড়শিরা জানান, শুক্রবার দিনভর জিতেন্দ্রর ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় সন্ধ্যায় তাঁরা ডাকাডাকি করেন। সাড়া না পেয়ে চন্দননগর থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। বিহার থেকে মৃত শ্রমিকের দিদি-জামাইবাবু শনিবার চন্দননগরে আসেন। দিদি রাজকুমারী দাস বলেন, ‘‘মিল এ ভাবে বন্ধ থাকলে শ্রমিকের পেট চলবে কী করে? অনটনের জন্যই ভাই মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে। জন্মের আগেই সন্তা‌ন বাবাকে হারাল।’’

জিতেন্দ্রর প্রতিবেশী মিল-শ্রমিক সন্তোষ দাসের ক্ষোভ, ‘‘অভাবের জেরে আগেও অসহায় অনেক শ্রমিক আত্মঘাতী হয়েছেন। চিকিৎসার অভাবেও অনেকে মারা গিয়েছেন। মিলটা চালুর পরে মৃত্যু-মিছিল থেমেছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ফের ইচ্ছেমতো মিল বন্ধ করায় মৃত্যুমিছি‌ল ফিরে না আসে, সেই ভয় হচ্ছে।’’

টানা ২৯ মাস বন্ধের পর গোন্দ‌লপাড়া জুটমিল ২০২০ সালের পয়লা নভেম্বর চালু হয়েছিল। গত পয়লা জানুয়ারি ফের বন্ধ হয়। ২০ জুন ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পয়লা জুলাই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু, ১১ জুলাই থেকে উৎপাদন চালুর কথা থাকলেও তা হয়নি। উল্টে, গত বুধবার কারখানায় ফের তালা পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gondolpara Jute Mill Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE