Advertisement
০৫ মে ২০২৪
swimming pool

অর্ধসমাপ্ত সুইমিং পুল এখন মশাদের আস্তানা

পাঁচ বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় অসমাপ্ত ওই সুইমিং পুল এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গির মশার আস্তানা। পুলের নীচে চৌবাচ্চায় কিলবিল করছে মশার লার্ভা।

মশক-পুল: পড়ে থাকা এই সুইমিং পুলের জমা জলেই জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। সোমবার, হাওড়ার ওলাবিবিতলায়।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

মশক-পুল: পড়ে থাকা এই সুইমিং পুলের জমা জলেই জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। সোমবার, হাওড়ার ওলাবিবিতলায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ
হাওড়া শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৪৮
Share: Save:

মধ্য হাওড়ার অন্যতম ঘিঞ্জি এলাকা ওলাবিবিতলায় অপরিসর রাস্তার ধারে ২০১৭ সালে একটি আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং পুল তৈরির কাজ শুরু করেছিল হাওড়া পুরসভা। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে জমা পড়েছিল ৩২ কোটি টাকার বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর)। কিন্তু ২০১৮ সালের পরে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় পুলের নির্মাণকাজ। ইতিমধ্যেই ওই কাজ করতে গিয়ে নির্মাণ সংস্থার খরচ হয়েছে সাড়ে সাত কোটি টাকা। পাঁচ বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় অসমাপ্ত ওই সুইমিং পুল এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গির মশার আস্তানা। পুলের নীচে চৌবাচ্চায় কিলবিল করছে মশার লার্ভা। গোটা পুলটি এখন ঠিকাদারদের নির্মাণ সামগ্রী রাখার গুদামঘর।

২০১৩ সালে হাওড়া পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরেই একের পর এক প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তৎকালীন তৃণমূল-পরিচালিত পুর বোর্ড। ওই প্রকল্পগুলিরই অন্যতম ছিল ওলাবিবিতলায় একটি আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং পুল তৈরি করা। প্রায় ৩২ কোটি টাকার সেই প্রকল্পে একসঙ্গে চারটি পুল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তার মধ্যে দু’টি শিশুদের জন্য, বাকি দু’টি বড়দের। এর পাশাপাশি পরিকল্পনা ছিল একটি দশতলা মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির। ঠিক হয়েছিল, এলাকার রাস্তা দখল করে থাকা গুমটি দোকানগুলিকে ওই মার্কেট কমপ্লেক্সে স্থানান্তরিত করা হবে। এর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট গুমটি দোকানগুলিকে পাশেই বেজপুকুর মাঠে অস্থায়ী ভাবে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। স্থির হয়েছিল, দশতলা মার্কেট কমপ্লেক্সটি তৈরি হয়ে গেলে বেজপুকুর মাঠের সবুজ ফিরিয়ে দিয়ে দোকানগুলি ওই বাজারে স্থানান্তরিত করা হবে।

কিন্তু প্রথম দিকে জোরকদমে সুইমিং পুলের কাজ শুরু হলেও ২০১৮ সালের পরে সেই কাজ আর এগোয়নি। পুলটির নির্মাণকারী সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘প্রশাসনিক স্তরে সমস্ত রকম অনুমতি নিয়েই কাজ শুরু হয়েছিল। মেয়র পরিষদের বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদিতও হয়। প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার কাজ ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমাকে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার পরে গত তিন বছরে আর কোনও টাকা দেয়নি পুরসভা।’’

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে সুইমিং পুলের কাজ এক চুলও এগোয়নি। উপরন্তু, পুলের একতলায় তৈরি করা চৌবাচ্চাগুলি বর্তমানে হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টির জমা জলে মশার লার্ভা বৃদ্ধির আস্তানা। অন্য দিকে, বেজপুকুর মাঠের সবুজ ধ্বংস করে তৈরি হওয়া দোকানগুলির জন্য বিকল্প কোনও ব্যবস্থাও পুরসভার তরফে করা হয়নি। অর্ধসমাপ্ত ওই সুইমিং পুলে গিয়ে দেখা গেল, পুলের নীচে তৈরি হওয়া চৌবাচ্চাগুলিতে বৃষ্টির জল জমে রয়েছে। পুলের ছাদের এক কোণেও দাঁড়িয়ে রয়েছে জল। আর পুলের নীচের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরসভার ঠিকাদারদের নির্মাণ সামগ্রী-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার গুদাম। আর্বজনায় ভরে আছে পুলের চার দিক।

কিন্তু এত টাকা খরচ হওয়া সত্ত্বেও এই প্রকল্পের কাজ শেষ হল না কেন? এ বিষয়ে বর্তমান পুরকর্তাদের বক্তব্য, ওই ঘন বসতিপূর্ণ জায়গায় একেই ঢোকা-বেরোনোর রাস্তার অভাব রয়েছে। সেখানে আন্তর্জাতিক মানের এমন একটি সুইমিং পুল তৈরি করা বাস্তবসম্মত নয়। আর এত টাকাও পুরসভার নেই। হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই সুইমিং পুলটি নিয়ে এখন আর কিছু করার নেই। পুলে জল জমে আছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। মশার উপদ্রব ঠেকাতে সেখানে লার্ভিসাইড তেল দেওয়া হচ্ছে। পরে সুইমিং পুলের বদলে অন্য কোনও বাস্তবসম্মত বিষয় পেলে সেটি রূপায়িত করার পরিকল্পনা আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

swimming pool Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE