Advertisement
০২ মে ২০২৪
Illegal Construction

সামনে টাঙানো পুর নকশার বোর্ড, পিছনে অবৈধ নির্মাণ হাওড়ায়

এক দিকে পুরসভার নিয়ম মেনে নির্মীয়মাণ বহুতলের সামনে পুরসভার অনুমোদিত নকশা ঝোলানো হয়েছে। অন্য দিকে, সেই অনুমোদিত নকশাকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নোটিস বোর্ডের পিছনেই চলছে বেআইনি নির্মাণ।

পুর অনুমোদিত নকশার পিছনেই হাওড়ায় বেআইনি ভাবে তৈরি বহুতলটি।

পুর অনুমোদিত নকশার পিছনেই হাওড়ায় বেআইনি ভাবে তৈরি বহুতলটি। —নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৭:৪২
Share: Save:

এ যেন সেই ‘খাচ্ছে, কিন্তু গিলছে না’ জাতীয় পরিস্থিতি। বিধি আছে, বিধি মানার ঘোষণাও আছে। কিন্তু আদতে বিধি মানা হচ্ছে না।

এক দিকে পুরসভার নিয়ম মেনে নির্মীয়মাণ বহুতলের সামনে পুরসভার অনুমোদিত নকশা ঝোলানো হয়েছে। অন্য দিকে, সেই অনুমোদিত নকশাকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নোটিস বোর্ডের পিছনেই চলছে বেআইনি নির্মাণ। আইন মেনে চলার দাবি জানিয়ে বেআইনি কাজ চালিয়ে যাওয়ার এ এক অদ্ভুত কৌশল! ঘটনাস্থল, হাওড়া পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অবিনাশ ব্যানার্জি লেন। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার পাশেই চলছে এই নির্মাণকাজ। তবু পুরসভা যেন তা দেখেও দেখে না। অথচ, যে কোনও সাধারণ মানুষও দেওয়ালে ঝোলানো নকশা দেখলেই বুঝতে পারবেন যে, সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে তৈরি করা হচ্ছে বাড়িটি।

রাজ্যের প্রধান সচিবালয় নবান্নের সামনে মন্দিরতলার কাছেই অবিনাশ ব্যানার্জি লেন। নবান্নের কারণে ওই এলাকায় জমি থেকে ফ্ল্যাটের দাম এখন আকাশচুম্বী। তাই ঘন বসতিপূর্ণ ওই এলাকার অলিগলিতেও তৈরি হচ্ছে একের পর এক বহুতল। ঘেঁষাঘেঁষি করে তৈরি হওয়া ওই সমস্ত বহুতলের বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই পুরসভার আইন মানা হয়নি বলে অভিযোগ। বহুতলগুলির চার দিকে ছাড়া হয়নি প্রয়োজনীয় জায়গা। তাই এলাকার পুরনো বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, যে কোনও দিন ওই এলাকাতেও গার্ডেনরিচের মতো ভয়াবহ কোনও ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

হাওড়া জুড়ে অবৈধ নির্মাণ রুখতে বর্তমান প্রশাসকমণ্ডলী এক বছর আগে ঘোষণা করেছিল, নির্মীয়মাণ সমস্ত বহুতলের সামনে পুরসভা অনুমোদিত নকশা, জমির বিবরণ, ঠিকানা এবং মালিক বা প্রোমোটারের নাম দেওয়া একটি বোর্ড ঝোলাতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। এই নিয়ম না মানলে ওই বাড়ির মালিক বা প্রোমোটারকে জরিমানা করা হবে। পুরসভার এই নিয়ম মালিক বা প্রোমোটারদের একাংশ মানলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না বলে পুর কর্তৃপক্ষই কয়েক দিন আগে স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানা হচ্ছে বলে স্রেফ ভাঁওতা দিয়েও যে বেআইনি বহুতল তৈরি করা যায়, তা কার্যত চোখে আঙুল দিয়ে পুরকর্তাদের দেখিয়ে দিয়েছে‌ন অবিনাশ ব্যানার্জি লেনের ওই বহুতলের নির্মাণকারীরা।

শনিবার অবিনাশ ব্যানার্জি লেনের ওই বহুতলের সামনে গিয়ে দেখা গেল, নির্মাণকাজ চলছে পুরোদমে। রাস্তার দিকে ওই বহুতলের যে সামান্য অংশ বেরিয়ে আছে, তার পাশেই একটি দেওয়ালে ঝোলানো হয়েছে পুরসভা অনুমোদিত নকশার বোর্ড। এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, ওই বোর্ড ঝোলানো হলেও কিছু দিন পরেই প্লাস্টিক দিয়ে তা ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি ঝড়-বৃষ্টিতে প্লাস্টিক খুলে যেতেই বোর্ডটি বেরিয়ে পড়েছে। সেই বোর্ডে পরিষ্কার লেখা রয়েছে, পুরসভার অনুমোদিত তলের সংখ্যা চার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই বহুতলটির সামনের একটি সরু অংশ তোলা হয়েছে পাঁচতলা পর্যন্ত। এবং পিছনের অংশটি (যা সামনের অংশকে আড়াল করেছে) তোলা হয়েছে ছ’তলা অবধি।

ওই বহুতলের উল্টো দিকের এক দোকানদার বললেন, ‘‘এই এল‌াকায় এমন অসংখ্য বেআইনি বহুতল তৈরি হচ্ছে। এই বহুতলটির চারতলার অনুমোদন থাকলেও ছ’তলা তোলা হয়েছে। যে ধরনের নিম্নমানের মালমশলা দিয়ে বাড়িটা তৈরি হচ্ছে, তাতে যে কোনও দিন ভেঙে পড়লে অবাক হব না। আশপাশের বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই বেআইনি বহুতল সম্পর্কে একাধিক বার বরো অফিসে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বললেন, ‘‘ওই বহুতল নিয়ে কোনও অভিযোগ এসেছে কি না, এখনও ঠিক জানি না। তবে, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুব শীঘ্রই আমাদের বিল্ডিং দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের ওখানে পাঠানো হবে। তাঁরা রিপোর্ট দিলেই বেআইনি অংশ ভেঙে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE