দরকার ১২ জন শিক্ষকের। আছেন পাঁচ জন। আর তিন জন আংশিক সময়ের শিক্ষক। তাতে সমস্যা মিটছে না। অগত্যা, দুই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে দিয়েই ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হচ্ছে আমতা-২ ব্লকের ঝামটিয়া হাই স্কুলে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা।
প্রধান শিক্ষক শেখ মোজাফ্ফর হোসেনের আক্ষেপ, ‘‘নিরূপায় হয়েই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দিয়ে পড়াতে বাধ্য হচ্ছি। শূন্যপদে শিক্ষক চেয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে আমরা বার বার আবেদন করেছি। কিন্তু যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁদের জায়গায় একজন শিক্ষকও আসেননি।’’
জেলার প্রত্যন্ত এলাকার এই স্কুলটি স্থানীয় কয়েকজন যুবক তৈরি করেন ১৮৮৪ সালে। প্রথমে ছিল জুনিয়র হাই স্কুল। পড়ানো হত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ২০০১ সালে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪০০। স্কুলে অনুমোদিত শিক্ষকের পদ ১২। ৬ জন শিক্ষক অবসর নেওয়ার পরে সেই জায়গায় আর কোনও নিয়োগ হয়নি। দু’জন শিক্ষক ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পের সুযোগ নিয়ে নিজেদের এলাকার স্কুলে বদলি হয়ে চলে যান। সম্প্রতি অবশ্য একজন শিক্ষক ওই প্রকল্পেই বদলি নিয়ে এই স্কুলে যোগ দেন। বর্তমানে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে ওই স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা ৫। ৭ জন শিক্ষকের অভাব এখনও প্রকট।
এই অবস্থায় বর্তমান পরিচালন কমিটি যৎসামান্য বেতনে তিন জন স্থানীয় বেকার যুবককে শিক্ষক হিসেবে বহাল করেছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। তাই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দিয়ে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। শিক্ষকদের মতো তাঁদেরও হাতে রুটিন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেই রুটিন অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন।
স্কুলে কোনও করণিক নেই। দুই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর মধ্যে একজন উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ, অন্য জন স্নাতক। যিনি স্নাতক, সেই সোনাই মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে যা করার করছি। এ বিষয়ে আমার আলাদা করে কিছু বলার নেই।’’
স্কুল সূত্রের খবর, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা মূলত নিচু শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদেরই দেখভাল করছেন। যাতে তারা গোলমাল না করে। একইসঙ্গে খুব সাধারণ কিছু বিষয়ে তাঁরা পড়াচ্ছেন।
ইংরেজি, ইতিহাস এবং বিজ্ঞান বিভাগে কোনও শিক্ষক নেই স্কুলে। করোনা পরিস্থিতির জন্য দু’বছর স্কুল বন্ধ ছিল। এখন খোলার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকের অভাব প্রকট হয়েছে। এ দিকে, স্কুলের এই অবস্থায় সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকেরা। ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তাঁদের মধ্যে।
মরিয়ম বেগম নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘মেয়ে এই স্কুলে পড়ে। করোনার জন্য দীর্ঘদিন বাদে ফের স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয়েছে। কিন্তু মেয়ে রোজ বাড়ি ফিরে বলে, একদমই পড়াশোনা হচ্ছে না, শিক্ষক নেই বলে।’’ অনেক অভিভাবক অন্য গ্রামের স্কুলে তাঁদের বাড়ির ছেলেমেয়েদের পাঠানোর কথাও চিন্তাভাবনা করছেন বলে দাবি করেছেন স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য বশির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘‘অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করা না হলে স্কুলের পঠনপাঠন সঙ্কটে পড়বে। তাতে এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা ধাক্কা খাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy