ছবি: প্রতিনিধিত্বমূলক।
মা-কে রড দিয়ে পিটিয়ে, গলা টিপে খুনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ছেলে। মঙ্গলবার তাঁকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শোনাল হাওড়ার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। সরোজ কাঁড়ারকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক এসপি সিংহ।
ঘটনাটি হাওড়ার সাঁকরাইলের। গত ২০২১ সালের অগস্টে মা শ্যামলী কাঁড়ারকে নিয়ে সাঁকরাইলের একটি ভাড়াবাড়িতে ওঠেন সরোজ। ঠিক তার পাঁচ দিনের মাথায় সরোজ বাড়ির মালিককে জানান, তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শীঘ্রই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো প্রয়োজন। সেই মতো বাড়ির মালিক গাড়ির ব্যবস্থা করে দিলে শ্যামলীকে সাঁকরাইলের হাজি এসটি মল্লিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। সেই সময় হাসপাতালে সরোজ দাবি করেন, বাড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছিলেন তাঁর মা। চিকিৎসকের সন্দেহ হওয়ায় তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা যায়, শ্যামলীকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর শরীরে সব মিলিয়ে ১৬টি গভীর ক্ষতচিহ্নও মিলেছে। এর পরেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরোজ বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। ঘটনার প্রায় এক বছর পর ২০২২ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
এই ঘটনায় সরকারি পক্ষের আইনজীবী অরিন্দম মুখোপাধ্যায় জানান, তদন্ত চলাকালীন জেরায় সরোজ দাবি করেন, টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মায়ের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই তাঁর ঝামেলা চলছিল। জেরায় সরোজের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে খুনে ব্যবহৃত দু’টি র়ডও উদ্ধার করেছে। বিচার চলাকালীন মোট সাত জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন— ভাড়াবাড়ির মালিক, তাঁর স্ত্রী, গাড়িচালক, ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক এবং সাঁকরাইল থানার চিকিৎসকেরা। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক আদালতে জানান, শ্যামলীর শরীরে যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন মিলেছে, তা কোনও ভাবেই পড়ে গিয়ে সম্ভব নয়। বিচার প্রক্রিয়ার সময় বিচারক এ ব্যাপারে সরোজকে প্রশ্ন করলে তিনি তার সদুত্তর দিতে পারেননি।
অরিন্দম আরও জানান, এই মামলাটি হাওড়া আদালতের ইতিহাসে অন্যতম ‘দ্রুত শেষ হওয়া মামলা’। কারণ, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মাত্র ছ’ মাসের মধ্যেই সাজা ঘোষণা হতে চলেছে এই মামলায়। অরিন্দমের কথায়, ‘‘যে মায়ের জন্য এক জন সন্তান পৃথিবীর আলো দেখে, সেই মাকে ছেলেটি যে ভাবে খুন করেছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। চার্জ গঠনের ছ’মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে পেরে আমরা খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy