এই ঘর থেকেই উদ্ধার হয় লাল্টুর দেহ, পাশের ঘরেই ছিলেন অসুস্থ মা। — নিজস্ব চিত্র।
রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া এ বার হাওড়ার শিবপুরে। বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার ছেলের পচাগলা মৃতদেহ। পাশের ঘরে শুয়ে অসুস্থ মা। এমনই দৃশ্য ঘিরে সাতসকালে চাঞ্চল্য হাওড়ার শিবপুরের প্রসন্ন দত্ত লেনে। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে শিবপুর প্রসন্নকুমার দত্ত লেনের একটি বাড়িতে ৪৮ বছরের লাল্টু সরকার এবং তাঁর মা বছর পঁয়ষট্টির মালতি সরকার থাকতেন। লাল্টু মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। কোনও রকম কাজকর্মও করতেন না বলে দাবি স্থানীয়দের। মিনতিও দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ। ২০১৬ সালে স্বামী মন্টু সরকারের মৃত্যু হওয়ার পর বাড়িতে মা এবং ছেলেই থাকতেন। পেনশনের টাকায় চলত সংসার। দু’জনের অসুস্থতার কারণে গত কয়েক মাসের পেনশনের টাকা পর্যন্ত তোলা হয়নি। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন তাঁরা অসুস্থতার জন্য বাইরের লোকের সঙ্গে বেশি মেলামেশাও করতেন না। আত্মীয়-স্বজন সে ভাবে খোঁজখবরও নিতেন না।
তাপস বাছাল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, গত দু’দিন ধরে ওই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। আজ সকালে বাড়ির দরজার নীচ দিয়ে পচা রক্ত বেরোতে দেখা যায়। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার বাসিন্দারা খবর দেন শিবপুর থানায়। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে লাল্টু মৃত অবস্থায় চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর মা মালতি পাশের ঘরে বিছানায় শুয়ে। শৈলেন মল্লিক নামে মৃতের এক আত্মীয়ের অভিযোগ, মা, ছেলে কারও সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতেন না। বাড়িতে গেলে দরজাও খুলতেন না। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা শুরু করেছে শিবপুর থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, কমপক্ষে তিন দিন আগে মারা গিয়েছেন ছেলে। অসুস্থ মালতিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে হাওড়া জেলা হাসপাতালে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, দীর্ঘ দিন অসুস্থতার কারণে লাল্টুর মৃত্যু হয়েছে।
এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১৫-র জুন মাসে কলকাতার শেক্সপিয়র সরণি থানার রবিনসন স্ট্রিটের ঘটনার কথা। এলাকার একটি ফ্ল্যাটের শৌচাগারের বাথটব থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক বৃদ্ধের দেহ। পরে উদ্ধার হয় এক মহিলা এবং দু’টি পোষ্য কুকুরের কঙ্কাল। ওই ঘটনায় জানা গিয়েছিল, মহিলার ভাই পার্থ দে ওই কঙ্কাল আগলে বসেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, আবার বেঁচে উঠবেন বাবা এবং দিদি। তা নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল রাজ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy