Advertisement
০৩ মে ২০২৪
টাকা তোলা নিয়ে ঘরে-বাইরে অভিযোগে অস্বস্তিতে শাসক
inttuc

TMC: শ্রমিক-নেতার ‘দুর্নীতি’, পথে তৃণমূল কাউন্সিলরই

দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্য জুড়ে বিরোধীদের নিশানায় শাসক দল। বিভিন্ন মামলায় ইডি-সিবিআই নিয়ে ব্যতিব্যস্ত তৃণমূলের অনেক তাবড় নেতা।

তৃণমূলের মিছিল আটকাচ্ছে পুলিশ।

তৃণমূলের মিছিল আটকাচ্ছে পুলিশ। ছবি: দীপঙ্কর দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডানকুনি শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২২ ০৭:১০
Share: Save:

ঘুরপথে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করছেন ডানকুনি টোলপ্লাজ়ার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র দুই নেতা। বিরোধীরা নন, এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার বিকেলে দলের ঝান্ডা হাতে দলবল নিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন তৃণমূলেরই কাউন্সিলর। দুর্নীতির প্রতিবাদে শুরু হওয়া শাসক দলের মিছিল আটকে দিল পুলিশ। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা, ধাক্কাধাক্কি হল।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্য জুড়েই বিরোধীদের নিশানায় শাসক দল। বিভিন্ন মামলায় ইডি-সিবিআই নিয়ে ব্যতিব্যস্ত তৃণমূলের অনেক তাবড় নেতা। জনমানসেও তার প্রভাব পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ডানকুনিতে প্রকাশ্যেই শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে দলেরই একাংশ দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় শাসক শিবির অস্বস্তিতে। মওকা পেয়ে শাসক দলকে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা।

দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ওই টোলপ্লাজ়ায় আইএনটিটিইউসি-র দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার বিকেলে নীচ ডানকুনি মোড় থেকে তৃণমূলের মিছিল শুরু হয়। নেতৃত্ব দেন ডানকুনি পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মণ্ডল। বিকেল ৪টে নাগাদ টোলপ্লাজ়ার কিছুটা আগে মিছিল আটকে দেয় ডানকুনি থানার পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশের বাধায় আর এগোতে না পেরে সেখানেই সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। গোলমালের জেরে ওই জাতীয় সড়কে যান চলাচলে অবশ্য কোনও সমস্যা হয়নি।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, টোলপ্লাজ়ার আইএনটিটিইউসি পরিচালিত শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক নিসার আলি মল্লিক এবং সহ সম্পাদক নিতাই দে অনৈতিক ভাবে কর্মী ছাঁটাই করেছেন। টোল থেকে ঘুরপথে তাঁরা টাকা আদায় করেন। স্থানীয় ছেলেদের কাজে নেওয়া হয় না তাঁদের অঙ্গুলিহেলনে। হাসান বলেন, ‘‘২০১১ সাল থেকে ডানকুনি টোলপ্লাজ়া আমাদের দলের শ্রমিক সংগঠন পরিচালনা‌ করছে। এর মধ্যেই নিসার আলি মল্লিক এবং নিতাই দে বহু টাকার মালিক। মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা মাইনে পেয়ে এত কম সময়ে ওঁরা দু’জন কী ভাবে এত টাকার মালিক হলেন? ওরা টোলপ্লাজ়ায় নিজেদের রাজত্ব কায়েম করেছেন। অনৈতিক ভাবে এক জন কর্মীকে বসিয়ে দেওয়া হল।’’

নিসার অভিযোগ মানেননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘যা বলার, সংগঠন বা দলের উচ্চ নেতৃত্বকে বলব। অভিযোগ তুললেই হবে না। প্রমাণ দিতে হবে।’’ টোলপ্লাজ়ার আইএনটিটিইউসি সভাপতি তথা হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য, জেলা তৃণমূ‌ল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। এক জন কর্মীকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। আলোচনা করে তাঁর বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হবে।’’ আর, তৃণমূলের শ্রীরামপুর-হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইন বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। বিস্তারিত ভাবে খোঁজ নিচ্ছি।’’

বিরোধীরা অবশ্য এত সহজে ছাড়তে নারাজ। ডানকুনির বিজেপি নেতা দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডানকুনি টোলপ্লাজ়াকে ঘিরে দুর্নীতির আখড়া তৈরি হয়েছে। শাসক দলের কাউন্সিলর নিজে দলবল নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। দুর্নীতি কত গভীরে, এ থেকেই স্পষ্ট। টোলপ্লাজ়ার কাজ যারা চালান, তাঁরা এখন বহু টাকার মালিক। এত টাকার মালিক হলেন কী করে, তার তদন্ত দরকার।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, পাচারের পথে গরু, কয়লা, মাটির গাড়ি চলাচলের বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয় টাকার মাধ্যমে। সিপিএম নেতা মানিক সরকারের বক্তব্য, ‘‘টোলপ্লাজ়ার ক্ষমতা দলের কোন গোষ্ঠীর হাতে থাকবে, সেই নিয়ে লড়াই চলছে। এটা শ্রমিকের স্বার্থে লড়াই নয়। কে কত টাকা লুটতে পারে, লড়াই তা নিয়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

inttuc TMC Protest Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE