Advertisement
২১ মে ২০২৪
Weight lifting

Weight Lifting: খিদের ভারই বড় চ্যালেঞ্জ ভারোত্তোলন-প্রশিক্ষকের

তাই সপ্তম শ্রেণির পর স্কুলের পাঠ ছেড়ে চাষের কাজে যোগ দিতে হয়েছিল অষ্টমকে। কিন্তু রক্তে ছিল খেলার নেশা।

প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অষ্টম দাস। নিজস্ব চিত্র

প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অষ্টম দাস। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
পাঁচলা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২১ ০৭:৪৮
Share: Save:

অভাবের সংসারে নিজের খেলার স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন অনেক বছর আগে। এখন তিনি পদক জয়ের স্বপ্ন দেখেন নতুন প্রজন্মের মধ্যে। তাঁর হাত ধরেই বিশ্বস্তরের ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় পদক জয় করে আনছেন গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়ে। অথচ হাঁড়ি চাপে না সেই প্রশিক্ষকের ঘরেই। স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে অভাবে দিন কাটছে হাওড়ার পাঁচলা দেউলপুর গ্রামের বছর বাহান্নর অষ্টম দাসের।

সংসারে অভাব ছিল। তাই সপ্তম শ্রেণির পর স্কুলের পাঠ ছেড়ে চাষের কাজে যোগ দিতে হয়েছিল অষ্টমকে। কিন্তু রক্তে ছিল খেলার নেশা। তাই কাজের শেষে বাড়ির উঠোনেই নানা ভারী জিনিস নিয়ে করতে ভারোত্তোলন। ১৯ বছর বয়সে জেলার সেরার শিরোপা পান। তারপর জাতীয় স্তরে বহুবার যোগ দিয়ে পদকও ছিনিয়ে এনেছেন। তবে কখনও বিদেশে গিয়ে খেলার সুযোগ মেলেনি। অষ্টমের খেদ, ‘‘পড়াশোনা জানি না বলেই হয়তো বিদেশে কেউ নিয়ে গেল না।’’ সংসারের জাঁতাকলে পড়ে কাজ নিতে হয় করাত কলে। সেখানে কাজ না থাকলে কখনও ঘরামির কাজ আবার কখনও মাটি কাটার কাজও করেন। মেয়েকে কোলে বসিয়ে অষ্টম বলেন, ‘‘দিনে ৪০০ টাকা মজুরি মেলে। কখনও কখনও কাজও মেলে না। এ ভাবেই অভাবে দিন কাটছে।’’

গত ২৬ বছর ধরে বাড়ির পাশে ফাঁকা জমিতে ভারোত্তোলনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অষ্টম। প্রায় ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন আসে তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিতে। তাঁর কাছে প্রশিক্ষিতদের মধ্যে অনেকেই কমনওয়েলথ গেমস, ওয়ার্ল্ড ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে খেলে এসেছেন। অচিন্ত্য শিউলি, জ্যোতি মাল তাঁর কাছে শিখেই পদক জয় করেছেন। কিন্তু তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে কোনও পারিশ্রমিক নেন না।

অষ্টম বলেন, ‘‘এই খেলার জন্য ভাল খাওয়া-দাওয়া প্রয়োজন। আমার কাছে যারা শিখতে আসে, তারা খুবই অভাবী পরিবারের। আমাকে যে টাকা দেবে, সেই টাকা দিয়ে ওরা ভাল খাওয়া-দাওয়া করলে ওদেরই ভাল হবে। আমি তো ওই দিনগুলো কাটিয়ে এসেছি। আমি জানি, কতটা লড়াই করতে হয়। তাই ওদের থেকে টাকা নেওয়ার কথাও কখনও ভাবিনি।’’ অষ্টমের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে আসা বর্ষা বর, এষা খাঁড়া বলেন, ‘‘উনি যে ভাবে শেখান, টাকা দিলেও হয়তো এমন শিক্ষা পাব না। আমরা টাকা দিতে পারি না। শুধু চাই, পদক জিতে এনে ওঁকে সম্মান জানাতে।’’

সরকারি কোনও সাহায্যও পান না অষ্টম। তাঁর খেদ, ‘‘সরকার বিভিন্ন ক্লাবকে খেলার জন্য টাকা দিচ্ছে। সেখানে আদৌ কী খেলা হয়, তার কেউ খোঁজ রাখে না। আর আমাদের মতো প্রশিক্ষকরা কোনও অর্থ সাহায্য পায় না। সরকারি সাহায্য একটু পেলে প্রশিক্ষণে আরও মন দিতে পারব।’’

এ বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘অষ্টম দাসকে ভাল করেই চিনি। তিনি জেলার অন্যতম ভারোত্তোলন প্রশিক্ষক। স্থানীয় বিধায়ককে অবশ্যই বলব, অষ্টমের খোঁজ নিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়তে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Weight lifting coach Hunger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE