Advertisement
০২ মে ২০২৪
promoter

প্রোমোটার খুনের নেপথ্যে ঝামেলা সিন্ডিকেটের, গ্রেফতার তিন

তিন জনের বিরুদ্ধেই পুলিশের খাতায় খুন, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখা ও মারপিটের অভিযোগ রয়েছে।

কালো হাত: হাওড়ার শালিমারের এখানেই ছিল রানি রাসমণির গ্রীষ্মকালীন অবসর যাপনের আবাস, লালকুঠি। প্রোমোটারদের গ্রাসে সেই ঐতিহ্য। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

কালো হাত: হাওড়ার শালিমারের এখানেই ছিল রানি রাসমণির গ্রীষ্মকালীন অবসর যাপনের আবাস, লালকুঠি। প্রোমোটারদের গ্রাসে সেই ঐতিহ্য। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৩৫
Share: Save:

হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় প্রোমোটার ধর্মেন্দ্র সিংহকে গুলি করে খুনের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের নাম চন্দন চৌধুরী, দেবেন্দ্র মিশ্র ও বিকাশ সিংহ ওরফে ভিকি। পুলিশ সূত্রের খবর,

তিন জনের বিরুদ্ধেই পুলিশের খাতায় খুন, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখা ও মারপিটের অভিযোগ রয়েছে। ধৃতেরা এলাকার একটি সিন্ডিকেটের মাথা বলেও সূত্রের খবর। স্থানীয় সূত্রের খবর, শালিমার এলাকায় রানি রাসমণির লালকুঠির ৫২ বিঘা জমি ঘিরে দুই সিন্ডিকেটের বিবাদ চলছিল গত এক মাস ধরেই। ওই জমিতে চলা নির্মাণকাজও এর জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জমিটি ঘিরে বড় গোলমালের আশঙ্কা করছিলেন এলাকার সিন্ডিকেটের মাথারা।

শালিমারের গঙ্গার ধার ঘেঁষা ৫২ বিঘা জমির উপরে তৈরি লালকুঠি রানি রাসমণির গ্রীষ্মকালীন বাসস্থান হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। তিনি সেখান থেকে হেঁটে প্রতিদিন গঙ্গাস্নানে যেতেন বলে শোনা যায়। বর্তমানে সেই জমির বেশ খানিকটা দখল হয়ে গেলেও বাকি জমিতে পাঁচ-ছ’টি বহুতল আবাসন তৈরি করা যায় বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। তাই ওই জমির উপরে এক দশকের আগেই প্রোমোটারদের নজর পড়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই জমি কেনাবেচা করতে গিয়ে ২০১২ সালের ৩ অগস্ট খুন হন বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকার বাবু বাগচী নামে এক ব্যবসায়ী। তাঁকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ধর্মেন্দ্র সিংহ, দেবেন্দ্র সিংহ ও কিট্টু বসু নামে এক ব্যক্তিকে। তিন জনই কয়েক বছর করে জেল খাটে। পরে জেল থেকে বেরিয়ে দেবেন্দ্র ধর্মেন্দ্রকে ছেড়ে শালিমারে চন্দন ও ভিকির দলে নাম লেখায়। স্থানীয় সূত্রের খবর ধর্মেন্দ্র বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় ফিরে শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় শুরু করে প্রোমোটিং ও নির্মাণসামগ্রী সরবরাহের একচেটিয়া ব্যবসা।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শালিমার ও বটানিক্যাল গার্ডেনের বড় এই দু’টি সিন্ডিকেটের মধ্যে গোলমাল শুরু হয় এর পরেই। ইতিমধ্যে রানি রাসমণির ওই ৫২ বিঘে সম্পত্তি লিজ় নিয়ে তাতে বহুতল আবাসন প্রকল্পের পরিকল্পনা করে কলকাতার একটি নামী নির্মাণ সংস্থা। প্রথমেই ভেঙে ফেলা হয় ঐতিহাসিক লালকুঠি। পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় এলাকা। দেবেন্দ্র ও চন্দনের সিন্ডিকেট প্রথমে ওই প্রকল্পে সমস্ত বালি, সিমেন্ট ও রড সরবরাহের বরাত পায়। তা নিয়েই শুরু হয় ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে তাদের গোলমাল। পুলিশ জানায়, ধর্মেন্দ্র পুরো কাজটি একা করতে চাইলে গোলমাল চরমে ওঠে। তার জেরে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আক্রোশ থেকেই সম্ভবত ধর্মেন্দ্রকে খুনের পরিকল্পনা করে দেবেন্দ্রর সিন্ডিকেট। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকেও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে চন্দন, দেবেন্দ্র ও ভিকির নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার খুনের পরেই মোবাইল বন্ধ করে এলাকা থেকে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত তিন জন। পরে রাতে মোবাইলের টাওয়ারের লোকেশন দেখে বর্ধমানের পালসিট থেকে ধরা হয় ভিকিকে। মেমারিতে ধরা পড়ে চন্দন এবং হাওড়া থেকে বাসে করে পালানোর সময়ে পুলিশ গ্রেফতার করে দেবেন্দ্রকে। তিন জনের বিরুদ্ধেই খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) মহম্মদ সানা আখতার। তিনি জানান, তিন জনকে হাওড়া আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ হয়।

ডিসি বলেন, ‘‘এই খুনের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়িক কারণেই এই খুন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। ঘটনায় আর কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ধর্মেন্দ্রর মোটরবাইকের পিছনে যে ব্যক্তি ছিলেন, তিনি চন্দনকে খুনি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, চন্দনই ধর্মেন্দ্রকে প্রথম গুলিটা করে।’’

অন্য দিকে, প্রকাশ্য রাস্তার গুলিতে ঝাঁঝরা করে খুনের ঘটনার পরে বুধবারও থমথমে ছিল গোটা বটানিক্যাল গার্ডেন থানা এলাকা। বন্ধ ছিল দোকানপাট, যানবাহন। এলাকায় টহল দিতে নামানো হয়েছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

promoter murder Syndicate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE