ডাইনি অপবাদে এক আদিবাসী বধূকে নিগ্রহের চেষ্টার অভিযোগে ধৃত ৭ জনকে শনিবার আরামবাগ আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৬ অক্টোবর ওই বধূর জবানবন্দী নেওয়া হবে। এ দিকে এক রাত থানায় আশ্রয় দেওয়ার পরে এ দিন বিকেলে ওই বধূকে বাড়ি ফেরাল পুলিশ। ঘটনাটি গোঘাটের গোয়ালসারা গ্রামের।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন দশেক ধরে মাঝেমধ্যেই অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিলেন গোয়ালসারা গ্রামের ওই বধূ। পড়শিদের পরামর্শ অনুযায়ী গত মঙ্গলবার ওই বধূকে নিয়ে তাঁর মা গ্রামেরই জানগুরু লখিন্দর টুডুর কাছে যান। জানগুরু জানিয়ে দেয়, বধূর উপর ‘ডাইনি’ ভর করেছে। বধূর মায়ের অভিযোগ, তার পর থেকেই কারও কিছু হলে মেয়ের কারণেই হয়েছে বলে হুমকি-সহ মানসিক নির্যাতন শুরু হয়।
এ নিয়ে শুক্রবার চূড়ান্ত সালিশি সভার আয়োজন করেন গ্রামের দুই মোড়ল— বাবু সরেন এবং মোহন্ত মান্ডি। অন্য গ্রাম থেকেও কয়েক জন মোড়ল আসেন। মোড়লেরা বধূর সাজা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন। এ নিয়ে যখন জল্পনা চলছে, তখন বধূর মা গ্রামের জুনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক শেখ আনোয়ার আলির কাছে গিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানান। আনোয়ার পুলিশ এবং ব্লক প্রশাসনকে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় দুপুর ১টা নাগাদ। তখন সালিশি সভার তোড়জোড় চলছে। বধূর বাড়ির উঠোনে মোড়ল এবং পড়শিরা হাজির। চলছিল কটূক্তি, হুমকি। পুলিশ দেখেই মোড়ল বাবু সরেন পালায়। মোহন্ত মান্ডি, লখিন্দর টুডু -সহ সাত জনকে পুলিশ ধরে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ গোঘাট ১-এর বিডিও অসিতবরণ ঘোষ, গোঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৃণাল আলু-সহ ১৫ জন প্রশাসনিক আধিকারিক এবং জন প্রতিনিধি গোয়ালপোতা গ্রামের ওই আদিবাসী পাড়ার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান। প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা ডাইনি প্রথা যে কুসংস্কার তা বোঝান। বিডিও বলেন, ‘‘অনেকেই কথা দিয়েছেন ওই বধূ বাড়ি ফিরলে কোনও সমস্যা বা অশান্তি হবে না।’’ বিকেল ঠিক ৫টা নাগাদ বাড়ি ফিরে ওই বধূ বললেন, ‘‘গ্রেফতার হওয়া পড়শিদের বড় কোনও সাজা হোক আমি চাই না। ওঁরা যে ভুল করছিলেন তা বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy