মুণ্ডেশ্বরী নদীর বেহাল বাঁধ। গোপীমোহনপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
নিম্নচাপের হাত ধরে বর্ষা হাজির। অথচ, এ বারে এখনও বন্যাপ্রবণ আরামবাগ মহকুমায় নদীবাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হল না। ফলে, অতিবর্ষণ হলে বা ডিভিসি বাড়তি জল ছাড়লে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা। বাড়ছে ক্ষোভ। বিভিন্ন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা এ নিয়ে সেচ দফতরের বিরুদ্ধে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগও তুলছেন।
মহকুমার মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর, দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণ নদী। এ ছাড়াও আছে আমোদর, হরিণাখালি, তারাজুলি, সিঙ্গার, কানা দ্বারকেশ্বর, হরহরা, আকবরী, রামপুর ইত্যাদি অসংখ্য খাল-বিল। বর্ষায় ডিভিসির ছাড়া জলে মহকুমার বহু এলাকা প্লাবিত হয়। ছ’টি ব্লকের ৬৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৩টিই বন্যাপ্রবণ বলে চিহ্নিত। আরামবাগ পুরসভার ১৮টির মধ্যে ৬টি ওয়ার্ডও জলমগ্ন হয়।
নদীবাঁধগুলির মধ্যে সেচ দফতরের আরামবাগ ডিভিশনের অধীনে রয়েছে দ্বারকেশ্বর এবং রূপনারায়ণ নদীর ৫২.৫০ কিলোমিটার বাঁধ। বাকি চাঁপাডাঙ্গার মুণ্ডেশ্বরী সেচ বিভাগের অধীন দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীর যথাক্রমে ৬০ কিমি এবং ৫০ কিমি নদীবাঁধ। কিন্তু টাকার অভাবে বাঁধের কাজের সময়ে শেষ করা যায়নি বলে মেনে নিয়েছেন সেচ দফতরের কর্তারা।
নদীবাঁধ মেরামতির কাজ যে প্রচুর বাকি থেকে গিয়েছে তা কার্যত মেনে নিয়েছেন আরামবাগ মহকুমা সেচ দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রিয়ম পাল। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত আরামবাগের চাঁদুরে নদীবাঁধের কাজ হচ্ছে। মাড়োখানার পানশিউলি, গাবতলা, জগত্পুর এবং শশাপোতা-সহ ৮টি জায়গায় বাঁধের কাজের প্রকল্প শীঘ্রই অনুমোদন হয়ে যাবে। যেমন যেমন অনুমোদন মিলবে, সেই মতো কাজ হবে। তবে, আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে বালির বস্তার উপরেই বেশি করে নির্ভর করতে হবে।’’ অন্যদিকে, সেচ দফতরের মুণ্ডেশ্বরী বিভাগের সহকারী বাস্তুকার আশিসকুমার চট্টোপাধ্যায় জানান, দু’এক জায়গায় কাজ চলছে। শীঘ্রই ১৬টি জায়গায় নদীবাঁধের ভাঙন রোখার কাজ শুরু হবে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য বার বর্ষার কয়েক মাস আগে থাকতেই ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে নদীবাঁধগুলি মাটি ফেলে পোক্ত করা হতো। এ বার সে ভাবে বরাদ্দ না মেলায় এবং ওই প্রকল্প নিয়ে কিছুটা ধন্দ তৈরি হওয়ায় সেই কাজ প্রায় বন্ধই ছিল। নদীবাঁধ সংস্কার বা মেরামতের জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে সেচ দফতরের উপরেই। মহকুমার নদীবাঁধগুলির ভাঙা এবং সহজে ভেঙে যায়, এমন অংশ কম নয়। দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণ— এই তিন নদীর বাঁধগুলির ভাঙা এবং দুর্বল অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে কমপক্ষে ১৮০টি জায়গা। সেই সব অংশের মেরামত হচ্ছে না বলে বিভিন্ন গ্রামের মানুষের অভিযোগ।
বন্যায় সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হয় খানাকুলের দু’টি ব্লকে। খানাকুল-২ ব্লকের বিডিও অনুপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘কমপক্ষে ৪৪টি পয়েন্টে বাঁধ মেরামত অতি জরুরি জানিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু দুর্বল জায়গা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সেচ দফতর সরেজমিনে তদন্ত করে কাজ করবে। সেই কাজ কবে হবে জানা নেই।’’
খানাকুল-১ ব্লক এলাকার তাঁতিশাল এবং অরুন্ডা পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকটি-সহ প্রায় ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা (পয়েন্ট) মেরামত আশু প্রয়োজন জানিয়ে বিডিও গোবিন্দ হালদার বলেন, ‘‘সেচ দফতর দ্রুত বাঁধ মেরামত না করলে ডিভিসির ছাড়া জলের চাপে ভেঙে গিয়ে প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে।’’ পুড়শুড়া ব্লকের ডিহিবাতপুর, পুড়শুড়া-১, শ্যামপুর, চিলাডাঙ্গি এবং শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত এলাকাতেও নদীবাঁধের বেশ কিছু দুর্বল জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে। একই রকম ভাবে অন্তত ১৬টি জায়গার নদীবাঁধ সেচ দফতর কবে মেরামত করবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আরামবাগ ব্লক প্রশাসনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy