Advertisement
১৮ মে ২০২৪

‘অ-মাইক’ হল না শাসকদলই

সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। পরীক্ষার মধ্যে মাইক বাজিয়ে রাজনৈতিক সভা করার অনুমতি চেয়েছিল তারা। প্রধান বিচারপতি সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। জয় হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। 

বেপরোয়া: মাইকে বক্তব্য রাখছেন এক তৃণমূল নেতা। নিজস্ব চিত্র

বেপরোয়া: মাইকে বক্তব্য রাখছেন এক তৃণমূল নেতা। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত সরকার ও দীপঙ্কর দে
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৩
Share: Save:

সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। পরীক্ষার মধ্যে মাইক বাজিয়ে রাজনৈতিক সভা করার অনুমতি চেয়েছিল তারা। প্রধান বিচারপতি সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। জয় হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের।

মঙ্গলবার সেই রাজ্যেই শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল মাইক বাজিয়ে রক্তদান শিবির করার। নেতারা সাফাই দিলেন, ‘‘পরীক্ষাকেন্দ্র এখান থেকে অনেক দূরে।’’ শুধু হুগলি জেলাতেই সরস্বতী পুজো, শাসকের অনুষ্ঠান, পুলিশের খেলা-সহ নানা বিষয়ে মাইক বাজানোর অভিযোগ উঠল নানা জায়গায়। রাজবলহাটে ছাত্রছাত্রী এবং প্রবীণ নাগরিকরা সাঁটালেন পোস্টার— ‘পরীক্ষা শুরু হল। এ বার তো ডিজে বন্ধ কর।’’

মঙ্গলবার থেকে শুরু হল মাধ্যমিক পরীক্ষা। অথচ, সর্বত্রই মাইকের আওয়াজ শোনা গিয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। কিন্তু উদ্যোক্তারা দাবি করলেন, পরীক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা হয়নি। পুলিশ যথারীতি জানিয়ে দি‌ল, থানায় অভিযোগ হয়নি। তাই ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

মগরায় ধুমধাম করে সরস্বতী পুজো হয়। শনিবার থেকে এখানে পুজো শুরু হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই রাস্তাঘাটে তারস্বরে ডিজে এবং মাইক বেজেছে। এ দিনও তার অন্যথা হয়নি। বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্তাদের দাবি, এ দিন বেলা ১২টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত অর্থাৎ পরীক্ষা চলার সময় মাইক বাজানো হয়নি। তবে বিকেল থেকে মাইক বেজেছে বলে তাঁরা

মেনে নিচ্ছেন।

মগরার একটি পুজোর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘সারাদিন মাইক বাজাইনি। শুধু সন্ধ্যায় ঘোষণার প্রয়োজনে বক্স বাজাতে হচ্ছে।’’ অভিযোগ, মাইক নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। প্রশাসনিক আধিকারিকদের সাফাই, মাইকের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েনি। সেই কারণেই ব্যবস্থা

নেওয়া যায়নি।

এ দিন তারকেশ্বরের নাইটা-মালপাহাড়পুর পঞ্চায়েতের মালপাহাড় আদিবাসীপাড়ায় শাসক দলের রক্তদান শিবিরেও মাইক বেজেছে বলে অভিযোগ। গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার শিবিরের উদ্বোধন করেন। মাইকে ‘উন্নয়নের’ ফিরিস্তি শোনান নেতারা। স্থানীয় এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘কি আশ্চর্য! শাসক দলের লোকেরাই মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনে মাইক বাজাচ্ছে। পুলিশ নীরব।’’

ওই রক্তদান শিবিরের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা, পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান শেখ মনিরুল অবশ্য এর মধ্যে অন্যায়ের কিছু দেখছেন না। তাঁর যুক্তি, ‘‘এখান থেকে ছয় কিলোমিটারের মধ্যে কোনও পরীক্ষাকেন্দ্র নেই। তাও ছোট লাউডস্পিকার বাজিয়েছি।’’ পুলিশের বক্তব্য, গ্রামে রক্তদান শিবির হলেও মাইক বেজেছে কি না, তা জানা নেই। এ ব্যাপারে কোনও অভিযোগ আসেনি। থানায় অভিযোগ জমা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য শনিবার বেলা ১২টা থেকে মাইক বাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। যদিও গ্রাম থেকে শহর— কোথাও মাইক বাজানোর উপরে লাগাম পড়ানো যায়নি বলে অভিযোগ। কয়েকটি ক্ষেত্রে পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে কিছু জায়গায় মাইক-বক্স বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ দিনই ডানকুনিতে একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে পুলিশ এবং পরিবহণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রীতি ক্রিকেটে বক্স বাজানোর অভিযোগ ওঠে। যদিও পুলিশের দাবি, সংস্থাটির তরফে বক্স আনা হলেও পুলিশ তা বন্ধ করে দেয়। হ্যান্ড মাইক দিয়ে খেলা পরিচালনা করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE